বিএনপির দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯৯ সালের গঠিত চারদলীয় জোটের মাধ্যমে শুরু হয় পথ চলা। বর্তমানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াত ইসলামী। তবে রাজনীতিরি মাঠে দীর্ঘদিন ধরে টানাপড়েন চলছিল বিএনপির অন্যতম মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সাথে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন সময় জামায়াত ছাড়ার কথা বললেও জামায়াতের পক্ষ থেকে কেউ এ বিষয়ে এতদিন কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে সম্প্রতি এক সভায় ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দলের একটি ঘরোয়া বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সাথে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেটা আর ফিরে আসেনি।’
জামায়াতের আমির আরো বলেন, ‘বছরের পর বছর এ ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না। আমরা তাদের সাথে স্পষ্ট খোলামেলা আলোচনা করেছি, এর সাথে তারা ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।’
এদিকে জামায়াত আমিরের এমন বক্তব্যে বিএনপিতে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির সাথে থেকে জামায়াতের আমির যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিএনপির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর। তার বক্তব্যের ভিডিও পর্যালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের সমন্বয়কারী ও বিএনপির নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি ভিডিওটি দেখিনি। তাই এ বিষয়ে আমি কোনো বক্তব্য দেব না।।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, জামায়াত জোট ছেড়েছে এমন কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। তবে আমার কাছে মনে হয় না জামায়াত-বিএনপি জোট ছেড়ে দেবে। জামায়াত যদি এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেটা জামায়াতের ভুল সিদ্ধান্ত হবে বলেও আমি মনে করি।
তবে জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের যে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, সে বিষয়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম দাবি করেন, আমিরের বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপন হয়নি। জামায়াতে ইসলামী বিএনপি জোটের সাথে আছে, জোট ছাড়েনি। তবে দীর্ঘ এক বছর পর্যন্ত জোটের কোনো বৈঠক হয়নি। জোটের যে গুরুত্ব এবং তাৎপর্য বিএনপি সেটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেই আমিরে জামায়াত তার মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
যেভাবে শুরু বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক_
বিএনপি সূত্র বলছে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ১৪০টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপি। সরকার গঠন করতে তখন বিএনপির কমপক্ষে আরো ১১টি আসনের প্রয়োজন ছিল। সেই সময় এ নিয়ে জয়ী বাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সাথে বিএনপির আলোচনা চলছিল। তারাও সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দিতে রাজি ছিল; বিনিময়ে চেয়েছিল একজনকে মন্ত্রী বানাতে। কিন্তু জামায়াত শর্তহীন সমর্থন দিতে রাজি হয়। সেই থেকে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের সূচনা।
তবে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সাথে একজোট হয়ে জামায়াতও সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। এরপর কিছুটা ভাটা পড়ে বিএনপির-জামায়াত সম্পর্কে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আনোয়ার জাহিদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান কাজী জাফরের মাধ্যমে আবার জামায়াতের সাথে খালেদা জিয়ার সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হককে সাথে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও পরবর্তী সময়ে জোট থেকে এরশাদ বেরিয়ে গেলেও কাজী জাফরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ থেকে যায়; যা পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি (জেপি) হয়। বর্তমানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ