ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চাল-ডালে নৈরাজ্য

প্রকাশনার সময়: ২০ আগস্ট ২০২২, ০৮:১৬

সর্বশেষ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর, চালের দাম এখন পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা। রাজধানীর চালের প্রধান পাইকারি বাজার বাবুবাজারসহ সারাদেশের চাল সংশ্লিষ্ট কেউই দাম কমা নিয়ে আশার কথা শোনাতে পারছেন না। এমনকি চাল আমদানির পরেও দাম কমার সম্ভাবনা নেই, বলছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে হঠাৎ করেই বেড়েছে সব ধরনের ডালের দাম। চাল-ডালের বাজারে যেন নৈরাজ্য চলছে। দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে বছরজুড়েই আলোচনায় চাল। বন্যা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি চালের বাজার বেসামাল হবার পেছনে উপলক্ষ হিসেবে কাজ করেছে। রাজধানীতে খুচরা বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৫৫ টাকা আর চিকন চাল এরই মধ্যে ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। চালের পাশাপাশি এখন আবার দু’সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ডালের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা মসুর ডালের দর। মজুদ করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে-এমন অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, এখনই বন্ধ করতে হবে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা। অপরদিকে, বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন- ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে আর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে পরিবহন খরচ।

চাল-ডালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। তাদের অভিযোগ, খাবারের খরচ জোগানোটা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। বাজারে সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে দেশি মসুর ডাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা আর আমদানি করা মসুর ডাল ১১০ টাকা। ছোলার ডাল ৮৫, আঙ্কর ৭০, মুগ ডাল ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা দোকানিদের অভিযোগ, অনেক পাইকার মজুদ করে, দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে যে ডাল উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। দেশে ডালের চাহিদা বছরে ২৫ লাখ টন হলেও উৎপাদন হয় প্রায় দশ লাখ টন। ফলে নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। কিন্তু ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে বেশি দামে ডাল আমদানি করতে হচ্ছে। তবে ডলারের দামের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম কমলে বাজার স্থিতিশীল হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে, মধ্য জুনে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যা চালের দাম নতুন করে উসকে দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জুন ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। প্রথম দফায় ৪ লাখ ৯ হাজার টন, পরে তা বাড়িয়ে মোট ৯ লাখ ১০ হাজার টন আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। একই সাথে আমদানি শুল্কও এক লাফে নামিয়ে আনা হয় ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে। এরপরও দাম কমছে না চালের।

রাজধানীর বাইরের চাল ব্যবসায়ীরাও সহসাই দাম কমার আশা দেখছেন না বলে জানান- পাবনা জেলা চাল ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সভাপতি শামসুর রহমান মানিক ও সাধারণ সম্পাদক আফতার উদ্দিন। মিলাররা ধান ৩০ দিন ও চাল ১৫ দিনের বেশি মজুত রাখতে পারবে না- এমন নির্দেশনাও রয়েছে সরকারের। তারপরেও কমছে না চালের বাজারের অস্থিরতা।

এদিকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে ভারত থেকে চাল আমদানি। কিন্তু আমদানি বাড়লেও আমদানিকারকরা লোকসানের আশঙ্কায় বন্দর থেকে চাল কম খালাস করছেন।

হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, গত মাসের ২৩ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ২২৫টি ভারতীয় ট্রাকে ৯ হাজার ২৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। যা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। আর বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে ১০০টি চাল বোঝাই ট্রাক।

আমদানি শুরু হওয়ার পর ডলার সংকট ও ভারতে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে ভাটা পড়ে। তবে সম্প্রতি এই বন্দর দিয়ে চালের আমদানি বেড়েছে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ টি ট্রাক এই বন্দরে প্রবেশ করলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাকে।

তবে আমদানি বাড়লেও ব্যাংকগুলোতে এলসির মার্জিন শতভাগ করায় লোকসানের আশঙ্কায় বন্দর থেকে চাল খালাস করছে না আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, ব্যাংকের মার্জিন রেট ও শুল্ক কমানো গেলে কিছুটা লোকসান কাটিয়ে আমদানিকৃত চালগুলো বাজারজাত করা যাবে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ