ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এসিড পড়েই তুরাগের সেই গ্যারেজে বিস্ফোরণ! 

প্রকাশনার সময়: ১৪ আগস্ট ২০২২, ১৮:২৮

রাজধানীর উত্তরা কামারপাড়ার রাজাবাড়ি এলাকায় রিকশা গ্যারেজে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা দগ্ধ হওয়া সবাই মারা গেছেন। তবে কিভাবে ঘটলো দুর্ঘটনা তা নিয়ে সংশয় এলাকাবাসীর।

বিস্ফোরণ ঘটার পর উত্তরা ফায়ার ষ্টেশনের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম তিনটি টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। পরবর্তীতে বিস্ফোরণ বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন ব্যাটারিতে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে ব্যাটারি বিস্ফোরণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করেন।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাকবলিত রিকশার গ্যারেজটি গত ৫ বছর ধরে চালু রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন সেখানে অভিযান চালায়নি বা ব্যবস্থাও নেয়নি। ওই এলাকায় আরও অসংখ্য এমন গ্যারেজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ থাকলেও পুলিশকে ম্যানেজ করে দেদারছে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চুরি করে কেউ চালালেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন সকালেই গ্যারেজের কারখানাটিতে আনা হয় কয়েক কার্টন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের স্প্রের খালি বোতল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারখানার কর্মচারীরা যখন বসে পুরাতন বোতলগুলোর মুখ খুলে রাখছিলেন ঠিক তখনই ঘটে বিস্ফোরণ। প্রথমবার বিস্ফোরণের পর আগুন নেভায় স্থানীয়রা। এর ২ ঘণ্টা পর পুনরায় আগুন লাগে, যা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আগুন নেভায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্য রিকশা চালকরা জানান, ঘটনার দিন রিকশা গ্যারেজে অনেকগুলো ব্যাটারি ওভার লোডিং চার্জ দেওয়া হচ্ছিল। চার্জকৃত ব্যাটারিতে গ্যারেজ মালিক এসিড পরিবর্তন করছিল। এসময় অল্প দুরবর্তীস্থানে অপর দুই কর্মচারী ধুমপান করছিলেন। ব্যাটারিতে এসিড ঢালার সময় অসাবধানতা বশত কিছু এসিড বিদ্যুতের তারে গিয়ে পড়ে। এসময় বিদ্যুতের শটসার্কিট হয়ে বিস্ফোরণে গ্যারেজ মালিক গাজী মাজাহারুল সহ মোট ৮ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। এবং বিস্ফোরণের সময় গ্যারেজে থাকা ১৩টি অটোরিকশা ছিন্নবিছিন্ন হয় এবং রক্ষিত অন্যান্য মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তুরাগের কামার পাড়ায় নিহত গাজী মাজহারুল ইসলামের অটোরিকশা গ্যারেজের পাশাপাশি একটি ভাঙারির দোকান ছিল। রিকশা গ্যারেজে অটোরিকশা রেখে ব্যাটারির নিয়মিত চার্জ দেওয়া হতো। সেখানে অটোরিকশার ব্যাটারিতে কোন সাবধানতা অবলন্বন না করে এসিড পরিবর্তন করেন সে।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা হতাশার সাথে জানান, তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্যন ব্যক্তি চলে গিয়েছ তারা এখন অসহায়, দিশোহারা, অনিশ্চতায় ভুগছেন বলে জানান। তারা বিত্তবানদের সহায়তা করার অনুরোধও করেন। ঘটনাস্থলের আশেপাশে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে গত ১ বছর আগে একই রিকশা গ্যারেজে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট হয় একজনের মৃত্যু হয় বলে জানান।

এলাকাবাসী আরো জানায়, পাশের ভাঙারির দোকান ঘরে রক্ষিত বিভিন্নস্থান থেকে ক্রয়কৃত ভাঙারির মালামাল ডা: রাযেসের জামকিল কিল স্প্রে কিছু ব্যবহারিত খালি কোটা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় কিন্তু তার দোকানের মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেও সব কয়টি কোটা অক্ষত থেকতে দেখা যায়।

নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ঘটনার পর হসপিটালে চিকিৎসাধীন আহতদের মৃত্যুর আগ মূহুর্তে আলমের শ্বশুর রফিক, নুর হোসেনের পিতা নাজমুলকে তারা বলেছে, রিকশা গ্যারেজ মালিক গাজী মাজহারুল ইসলাম ব্যাটারিতে এসিড পরিবর্তন করছিল, এ সময় অদূরে অপর দুই কর্মচারী ধুমপান করছিলেন। বাকিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিল হঠাৎ ব্যাটারিতে ঢালা এসিড বিদ্যুতের তারে ফোটা লেগে স্পার্ককিং হয় এবং মুহূর্তে আগুন লেগে গ্যারেজে থাকা সকল ব্যাটারিগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ঢাকা মহানগরীর মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ। দেখামাত্রই ধরার নির্দেশ দেওয়া আছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট শনিবার দুপুরে অটোরিকশার দোকানে চার্জকৃত ব্যাটারিতে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট হয়ে ব্যাটারি বিস্ফোরণের ঘটনায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্যারেজ মালিক গাজী মাজহারুল ইসলামসহ ৮ জন দগ্ধ হয় এবং এক সাপ্তাহের মধ্যে ৮ জনই মারা যান।

এঘটনায় অটোরিকশা গ্যারেজ ও ভাঙারির দোকানের মালিকের ভাই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বুধবার তুরাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ