ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হঠাৎ উত্তপ্ত বুয়েট, দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ১৪ আগস্ট ২০২২, ১৬:২৯ | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২২, ১৬:৩৭

গত ১১ অক্টোবর’২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)- এ সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। যদিও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও গত বছরের ২৪ জুলাই বুয়েটে সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সেসময় বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে গতকাল শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৫টায় বুয়েটের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া ও আলোচনা সভা করার কথা ছিল।

কিন্তু বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগের ব্যানারে কর্মসূচি দেয়ার প্রতিবাদে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের প্রশ্নের মুখে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বুয়েট অডিটোরিয়ামের সামনে থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা- এই বুয়েটে হবে না’, ‘ছাত্রলীগ- খুনি’, ‘খুনিদের ঠিকানা- এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘আবরার ফাহাদের খুনিদের- বুয়েটে ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।

এরপর রাত ৯টায় একটি প্রেস ব্রিফিং করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের বারবার নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়ায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এহেন কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা, বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং সুস্পষ্ট জবাব আশা করছি।’

এরপর থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সামাজিক যোযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভাও বুয়েট ক্যাম্পাসে আয়োজন করার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন।

ছাত্রলীগ যা বলছে :

এ বিষয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক সমাবেশে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বিষয়টিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ হিসেবে আখ্যা দেন। জয় বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা যারা মাথাচাড়া দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা হবে। তাদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড খতিয়ে দেখা হবে। প্রশাসনকে অনুরোধ করব, গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ করব; তারা যারা শোক দিবসের কর্মসূচি বানচালের প্রচেষ্টা নিয়েছে তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা উচিত। তারা রাষ্ট্রদ্রোহের মতো কাজ করেছে।

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারেন না। কারণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানে জাতির পিতা দেশের মানুষের জন্য কী করেছিলেন। আমি মনে করি, জামায়াত শিবিরের কুচক্রী মহল যারা বাংলাদেশকে কখনো মেনে নেয়নি তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আপনারা জানেন বুয়েটে আগস্ট মাসে জাতির পিতার জন্য একটি শোক সভার আয়োজন করেছিলেন সাবেক নেতারা। যারা এদেশের বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের সঙ্গে কি বেয়াদবি করল। এ ধরনের বেয়াদবদের কখনো ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি না।

বুয়েট প্রশাসনকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিষয়টি আবারো বিবেচনা করার কথা বলে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার এখতিয়ার কারো নেই। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে আপনারা কী বুঝাতে চান?

বুয়েট প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন রেখে জয় বলেন, ‘আপনারা কি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে বুয়েটকে জঙ্গি মুক্ত করতে পারবেন? পারবেন না। আপনাদের জন্য অশনি সংকেত, এই জঙ্গিচক্র আপনাদেরই প্রথমে হত্যা করবে। আপনাদের এখনি সচেতন হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, গতকাল বুয়েটে সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের আয়োজনে ১৫ই আগস্টের আলোচনা সভার যারা বিরোধীতা করেছেন তাদের প্রতি বাংলার ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে ধিক্কার জানাই। আপনারা যতই চেষ্টা করুন না কেনো- এই বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধূলিস্যাৎ করতে পারবেন না। বুয়েটে যে ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস রচিত রয়েছে সেই ইতিহাসকে কখনো আপনারা মুছে ফেলতে পারবেন না। বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম করে যারা অরাজকতা করছে তাদের কড়া হুশিয়ার করে বলে দিতে চাই, দ্বীপ-সনির ভাই, সহপাঠি এবং সহযোদ্ধারা এখনো বেঁচে আছে। তারা চাইলে ক্যাম্পাসের গন্ডির বাহিরে বুয়েটের তথাকথিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ করতে পারে। তাতে নিমেষেই বুয়েট নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে পরিণত হবে।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা যা বলছে:

রোববার (১৪ আগস্ট) “চলমান অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি” শিরোনামে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এতে শিক্ষার্থীরা বলেন, শনিবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়াম ভবনের সেমিনার রুমে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতৃবৃন্দ’ এর ব্যানারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রয়াণ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর’২০১৯ তারিখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়। বুয়েটের প্রশাসনিক আইন অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক সব শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক এবং একাডেমিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা সেই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বাধ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার দেখে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে জানান এবং কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থান নেন। সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে উত্থাপন করা হয়।

শোক দিবসের কর্মসূচিতে কোন প্রকার বাধা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তারা বলেন, সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠান যথারীতি শেষ হয় এবং শিক্ষার্থীরা সেখানে কোনো রূপ বাধা দেয়নি। আমাদের বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করা। অতীতে বুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিরাজমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি হয়েছেন। যাদের সর্বশেষ সংযোজন ছিলেন আবরার ফাহাদ। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির কালো থাবা আমাদের নিরাপদ ক্যাম্পাস যেন পুনরায় ত্রাসের রাজত্বে পরিণত না করতে পারে, সেই আশঙ্কার জায়গা থেকে শনিবার আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমবেত হই।

তাদের কর্মসূচিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জোর অপপ্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, এসব অপপ্রচার আমাদেরকে করেছে ভীত, সন্ত্রস্ত এবং একই সঙ্গে ব্যথিত করেছে। আজকে আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আমাদের শনিবারের কর্মসূচি কোনভাবেই ক্যাম্পাসে আয়োজিত শোক দিবসের অনুষ্ঠান বিরোধী ছিল না। ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেন। তার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা সমৃদ্ধিময় সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সদা প্রস্তুত।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ