২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জুন-জুলাই মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। ফলে করোনা সংকটে এক বছরেই প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার থাবায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তাদের ওয়েবসাইটে জিডিপির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ইতোমধ্যেই প্রবৃদ্ধির প্রতিবেদন আমরা প্রকাশ করেছি। একসঙ্গে ২০১৯-২০২০ এর চূড়ান্ত এবং চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক প্রবৃদ্ধি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে। আমার মনে হয়, এটা লুকানোর কিছু নয়। পরিসংখ্যানে সঠিক তথ্যে উঠে এলে দেশের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হয়।
বিবিএস প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চূড়ান্তভাবে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কৃষিখাতে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফলে করোনা সংকটেও অর্থনীতির চাকা সচল ছিল কৃষিখাতে। করোনা সংকটের মধ্যে দেশকে মূলত বাঁচিয়ে রেখেছিল কৃষিখাত। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ০২ শতাংশ। খাদ্য শষ্য, প্রাণিজ ও বনজ সম্পদ আহরণ ঠিক ছিল করোনা সংকটেও। কৃষির উপখাতে মৎসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির ধস নেমেছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। যা গত অর্থবছরে ছিল ১৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ফলে বিবিএস প্রতিবেদনে উঠে এসেছে করোনার বড় ধাক্কা লেগেছে শিল্পখাতে।
সেবাখাতেও বড় ধাক্কা লেগেছে প্রবৃদ্ধিতে। এই খাতে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিবিএস মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির ফলেই মূলত প্রবৃদ্ধি কমেছে। কারণ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির ছিল। যার প্রভাব প্রবৃদ্ধির ওপর পড়েছে। করোনার সার্বিক ক্ষতির হিসাব-নিকেশে প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এবারের প্রবৃদ্ধির হিসাবটা আমার কাছে বাস্তব মনে হয়েছে। করোনা মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত ছিল। যার প্রভাব প্রবৃদ্ধির ওপর পড়বে এটা স্বাভাবিক। আমার কাছে এ হিসাবটা সঠিক মনে হয়েছে।তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হিসাব প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। যেটা বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিলছিল না। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবটাও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কিন্তু যেহেতু চূড়ান্ত হিসাবে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে, সেহেতু এটা বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যায়। কারণ ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমরা বেশ কয়েকটা লকডাউনের মধ্যে পড়েছিলাম। সেসময় দেশের অর্থনীতি স্থবির অবস্থায় ছিল।
কিন্তু চলতি অর্থবছর কিন্তু শুরু থেকেই কোনো লকডাউনে পড়তে হয়নি। যার ফলে এ অর্থবছর প্রবৃদ্ধি বাড়বে। যদিও চলতি বছরের প্রথম নয়মাসে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে, সেক্ষেত্রে বলা যায় বছর শেষে গত অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছর প্রবৃদ্ধি বাড়বে। বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যেও বাংলাদেশের এই অর্জন সত্যিই প্রসংশনীয়। সঠিক তথ্য তুলে ধরায় পরিকল্পনামন্ত্রীর প্রশংসা করেন তিনি।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ