ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
বিপেজেএ আলোচনা সভায় আইন প্রণেতারা

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে’

প্রকাশনার সময়: ১১ আগস্ট ২০২২, ২১:২৪

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইন প্রণেতারা। তারা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ওই বর্বর হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, যারা পাশে ছিল এবং ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, তারা সকলেই সমানভাবে দোষী। তাই তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বৃহস্পতিবার ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের পার্লামেন্টস মেম্বরস ক্লাবে পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-বিপিজেএ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ আহবান জানান তারা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বিপিজেএ’র সভাপতি নিখিল ভদ্র। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, হুইপ মাহবুব আরা গিনি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, বিপিজেএ’র সদস্য সচিব কাজী সোহাগ, সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ, মিজান রহমান ও শাহজাহান মোল্লা।

সভায় বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ব নেতা উল্লেখ করে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বলেন, আজকে অনেকে বলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে কারা? সেটি তো পঞ্চম সংশোধনী দেখলেই বোঝা যায়। জিয়াউর রহমান কেন সেদিন পঞ্চম সংশোধনী করলেন? নিজেকে বাঁচানোর জন্যই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনেছিলেন। এখন তার উত্তরসুরিরা মাঝে মাঝে আন্দোলনের হুমকি দেয়। কিন্ত তাদের ডাকে মানুষ সাড়া দেয় না। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশে শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই নামটিও বঙ্গবন্ধুর দেয়া। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে বলতেন বাংলাকে স্বাধীন করতে হলে জয়বাংলা স্লোগান দিতে হবে। আমরা যখনই কোথাও মিছিল মিটিং হতো এই জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে উজ্জিবিত করতাম। বঙ্গবন্ধুর সময় সংবাদ মাধ্যমের বেশি স্বাধীনতা ছিল। অথচ বলা হয় বাকশাল ছিল এই ছিল সেই ছিল। সাংবাদিকরা নিজেরা লিখতে না পেরে বঙ্গবন্ধুকে দোষ দিত। আসলে মানুষকে চোখে ধুলা দিয়ে দেশকে অন্যভাবে পরিচালিত করাই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশে।

হুইপ মাহবুব আরা গিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহাননেতার জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ পেয়েছি। অথচ তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি বঙ্গমাতা, ছোট্ট রাসেলের কোন দোষ না থাকলেও তাদেরকে বাঁচতে দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় ঘোষিত হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ১২ খুনীর মধ্যে কয়েকজনের রায় কার্যকর হয়েছে। অন্যান্যদের শাস্তি কার্যকর হবে। এমনকি নেপথ্যের খুনীরাও চিহ্নিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হতো না। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসতো না। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই মুহুর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো। এই হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য ছিলো বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

র আ ম উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী বলেন, যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম তা প্রতিদিন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। আমি খুবই মর্মাহত যখন দেখি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়ানো হয়। আমরা কতিপয় দুবৃত্তের হাতে দেশ ছেড়ে দিতে পারি না। দেশকে এগিয়ে নিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সেদিন আওয়ামী লীগের নেতারা সেদিন খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গেই ছিল। আমরা ছাত্ররা একটা মিছিল করতে পারিনি। কারণ আমাদের উপরে যারা ছিলেন তারা প্রতিবাদ করতে দেননি। আওয়ামী লীগ নেতারা সেদিন অন্য ভূমিকা পালন করেছিল। কি দুর্ভাগা আমাদের।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, আওয়ামী লেীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল; এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বঙ্গবন্ধু মাত্র ৫৫ বছর আমাদের মাঝে ছিলেন। কিন্তু তার ত্যাগ ছিলো হাজার বছরের সমান। ষড়যন্ত্র করে জাতির পিতাকে ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। দেশের জনগণ এখন সঠিক ইতিহাস জানছে।

সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আলোচনার সভার আগে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের উপর প্রয়াত সাংবাদিক আব্দুল গফ্ফার চৌধুরী নির্মিত ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ