ঢাকা, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, সংকেত বেড়েছে

প্রকাশনার সময়: ২৪ মে ২০২১, ১৩:৪২
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের স্যাটেলাইট ইমেজ

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকার গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে সরে আরো ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়েছে। ঝড়ের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বর্তমান গতিপথ না বদলালে বাংলাদেশে আঘাত হানবে না। এর প্রভাবে সুন্দরবন এলাকায় মাঝারি ধরণের বৃষ্টিপাত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ থেকে সোমবার ভোরে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর পূর্বে ঠিক করা তালিকা অনুযায়ী এটির নাম হয় ইয়াস। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এই নামটি প্রস্তাব করেছিল ওমান। এর অর্থ 'হতাশা'।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, আরো শক্তি সঞ্চয় না করলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যে গতিতে এগোচ্ছে তাতে এটাকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ই বলা চলে এবং এটি মারাত্মক আকার ধরার সম্ভাবনাও নাই। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের বর্তমান গতিপথ উড়িষ্যা ও কলকাতার মাঝামাঝি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মাঝে মাঝেই গতিপথ পরিবর্তন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বর্তমানে উড়িষ্যার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিতে এগিয়ে যেতে পারে।

শনিবার উত্তর আন্দামান সাগর এবং আশেপাশের এলাকায় ওই লঘুচাপের তৈরি হয়। পরে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং আরো শক্তি সঞ্চয় করে সোমবার সকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় ইয়াস।

ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে না যাওয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমরা আবার সবাইকে সতর্ক করছি। আরেকটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। …আর সেই বিষয়ে পূর্ব সতর্কতা আমরা নিতে শুরু করেছি। ইনশাল্লাহ এতে আমরা সতর্ক থাকব, এই ঝুঁকি হ্রাস করতে পারব।”

যেকোনো দুর্যোগে ঝুঁকি কমানোর জন্য সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবেলায় এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিন গুণ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। মাঠ পযায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সোমবারও প্রস্তুতি কমিটির সভা রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে হবে। যে করেই হোক সবাইকে শেল্টারে আনতে হবে, একজনকেও রেখে আসা যাবে না। এবার আমরা টার্গেট রাখব, মৃত্যুহার যেন জিরো হয়।”

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশের সব বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা কয়েক দিন ধরে অহসনীয় গরমে অস্বস্তিকর অবস্থা জনজীবনে।

রোববার খুলনায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ অবস্থায় বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঝড়ো-বৃষ্টির আভাসও রয়েছে।

গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বাংলাদেশে আম্পানে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক হিসাবে সাড়ে এগারোশ কোটি টাকা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হিসাবে অন্তত ৭২ জন আর বাংলাদেশে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ