সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয়ে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ৮টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বুধবার (২০ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবদের সভায় নেওয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ে কার্যকর কর্মপন্থা নিরূপণে এ সভা হয়।
সভা শেষে ড. আহমদ কায়কাউস এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো:-
১. বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে সকল মন্ত্রণালয় (মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল অফিস) প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নিরুপণ করবে। সরকারি সকল দপ্তরে বিদ্যুতের ২৫% ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।
২. জ্বালানিখাতের বাজেট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা তেল ব্যবহার করেন, এখন তাদের বরাদ্দ ২০ শতাংশ কম হবে।
৩. অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা পরিহার করতে হবে এবং অধিকাংশ সভা অনলাইনে আয়োজন করতে হবে।
৪. অত্যাবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
৫. খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুদদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ অন্যান্য পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে।
৬. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পরিবহনে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
৭. অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বৃদ্ধিকল্পে অর্থ-বছরের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব ক্রয় পরিকল্পনা পুনঃপর্যালোচনা করে রাজস্ব ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেবে।
সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে। আসলে আতঙ্কগ্রস্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতে যাতে আমাদের কোনো খরায় (সংকট) পড়তে না হয়, সেজন্য সংযমী হতে এখন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, পুরো ব্যবস্থাগুলো কিন্তু আমাদের অবস্থা খারাপ, এ রকম কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমরা দেখছি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মন্দা যাচ্ছে, খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে, বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা আগেই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি, যাতে এ জাতীয় সমস্যায় না পড়ি।
বৈঠকে কোডিড পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয়-সাশ্রয় নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে সচিবরা আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস রাজস্ব ব্যয় সংকোচন, উন্নয়ন ব্যয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সচিবদের অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি মন্ত্রণালয়গুলোকে অনাবশ্যক ব্যয় পরিহারসহ সব ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাসের নির্দেশনা দেন।
সভায় অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ