ঢাকা, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

রাবিতে সদ্যনিয়োগ বাতিল ও সাবেক  ভিসির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ

প্রকাশনার সময়: ২৩ মে ২০২১, ১৬:৪৪
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুস সোবহানের দেয়া গণনিয়োগ বাতিল এবং তাঁর বিদেশ ভ্রমণ ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণনিয়োগের ফলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। চার সদস্যবিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটির আহবায়ক ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর তদন্ত প্রতিবেদন জমাদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাবির বিদায়ী উপাচার্য আব্দুস সোবহান তাঁর শেষ কর্মদিবসে অ্যাডহকভিত্তিতে ১৪০ জনকে গণনিয়োগ দিয়ে বিদায় নেন। ৬ মে নিয়োগ দেওয়া হলেও এর একদিন আগে ৫ মে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়েছে। এ নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। সেদিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। রোববার সকাল ১১টার দিকে এ কমিটির প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সোবহানের আরেকটি দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে। সুতরাং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। বিচারের আগেই তিনি পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তদন্ত কমিটি এই ধরনের সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে।

চার সদস্যবিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটির আহবায়ক ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ইউজিসি সদস্য ড. মো. আবু তাহের, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাকির হোসেন আখন্দ ও ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ডিভিশনের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান।

কমিটি সূত্রে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বে এভাবে ১৪০ জনকে নিয়োগ দিয়ে সাবেক উপাচার্য স্পষ্টতই আইন ও প্রশাসনিক রীতি-নীতি ভেঙেছেন। এ নিয়োগ দিতে গিয়ে তিনি অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। নিয়োগের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করেছে তদন্ত দল। কমিটির প্রতিবেদনে নিয়োগের ঘটনায় প্রধান দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ড. এম আব্দুস সোবহানকে। এ ঘটনায় প্রধান সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তার জামাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের প্রভাষক এটিএম শাহেদ পারভেজকে। এছাড়া সংস্থাপন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম ও পরিষদ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদকে সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তদন্ত কমিটি। এছাড়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এত বড় অবৈধ নিয়োগ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুই উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে বলে জানা যায়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কেবল শেষদিনে গণনিয়োগ পাওয়া ১৪০ জন নয়, স্বজনপ্রীতি ও যোগ্যতা কমিয়ে নিয়োগ পাওয়া আরো ৩৪ জন শিক্ষকের নিয়োগও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে এম সোবহানের দেওয়া ১৪০ জনের অবৈধ নিয়োগের সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই শিক্ষকদের স্ত্রী, সন্তান, জামাতাসহ বিভিন্ন নিকটাত্মীয় অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এজন্য অবৈধ এ নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদেরও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।

এদিকে রাবি শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, গত ৩ মে রাতে সোবহানের জামাতা শাহেদ পারভেজের নেতৃত্বে সিনেট ভবন থেকে নিয়োগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাকে সহায়তা করেন ইউসুফ আলী, তারিকুল আলম ও মামুন অর রশীদ নামে তিন কর্মকর্তা। নিজেদের সুবিধা আদায়ে গণনিয়োগে এ তিন কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছেন। এদের মধ্যে ইউসুফ আলীর স্বার্থ ছিল ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দেওয়া। অন্য দুই কর্মকর্তার স্বার্থ ছিল ভাইয়ের নিয়োগ নিশ্চিত করা। এর মধ্যে তারিকুল আলমের ভাই নিয়োগ পেয়েছেন প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের নিম্নমান সহকারী হিসেবে। মামুন অর রশীদের ভাইও চাকরি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ