গ্যাসের বিশাল ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় দেশব্যাপী বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ছে বলে মনে করছেন বিপিডিবি কর্মকর্তারা। তারা জানান, তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির কারণে ৩৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী, দেশে রোববার ১৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। যদিও ১২৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বাভাস ছিল।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘স্পষ্টতই কর্তৃপক্ষকে প্রাক্কলিত পরিমাণের চেয়ে বেশি লোডশেডিং হবে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী রোববার সন্ধ্যায় দেশের সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৬১৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে ১২ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ১৫০০ মেগাওয়াট ব্যবধান।
বিপিডিবি’র এই কর্মকর্তা বলেন ‘এই ব্যবধান লোডশেডিং এর মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।’
সাধারণত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৩০০-১৪০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠা-নামা করে এবং এই বছরের ১৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট রেকর্ড করা হয়েছিল।
বিপিডিবির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৪০০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ২০০ মেগাওয়াট, খুলনায় ২২০ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ২২০ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ১৪০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১২০ মেগাওয়াট, সিলেটে ৫০ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ১৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল।
অনেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিপিডিবি’র পরিসংখ্যান বিশ্বাস করেন না। বরং লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের মাত্রা সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি বলে মনে করেন তারা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেছেন, ‘বিপিডিবি কখনই তার পাওয়ার সাপ্লাই পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না।’
এদিকে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের অনেক গ্রাহকই ব্যাপক লোডশেডিং এবং ঘন ঘন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের কথা জানিয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার ভোক্তা হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিদিন তিন থেকে চার বার লোডশেডিং হয় এবং প্রতিবারই আধা ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।
একই ধরনের অভিজ্ঞতা রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, নাখালপাড়া, শান্তিনগর, মগবাজার, নিকেটন, গুলশান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডাসহ অন্যান্য এলাকার গ্রাহকেরাও জানিয়েছেন। তারা বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এ ধরনের লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের মাত্রা বাড়ছে।
বিপিডিবি কর্মকর্তারা গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাসকে দায়ি করেছেন। সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে সংকটের কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন: ‘গ্যাসের ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহের উন্নতি হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাধারণত স্বাভাবিক হবে।’
তিনি আরও দাবি করেন, যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও সমস্যায় ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি না করার সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে দেশের গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে।
বিশ্ব বাজারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি ৩৫ ডলারের বেশি বিক্রি হচ্ছে, যেখানে কয়েক মাস আগে তা ছিল ২৫ ডলারের নিচে। ফলস্বরূপ, স্থানীয় গ্যাস সরবরাহ নিয়মিত ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে প্রতিদিন দুই হাজার ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে। যার ফলে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট এর ঘাটতি সৃষ্টি হয়।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ