ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন

প্রকাশনার সময়: ২৫ জুন ২০২২, ১১:৪৯ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২২, ১৩:২৪

নানান ষড়যন্ত্রের জাল আর বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশের নির্ভরতার প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন উন্মুক্ত। শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে পদ্মাকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন বাঙালীর গর্বের প্রতীক বহুমুখী পদ্মা সেতু।

মাওয়া প্রান্তে টোল পরিশোধ শেষে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে তিনি ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেন।

এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ‘কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আজ আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের গর্ব, আমাদর অহংকার, আমাদের সক্ষমতা, এটি আমাদের প্রত্যয়, মর্যাদার প্রতীক। বাংলাদেশ আজ জাতীর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার নেতৃত্বে আমরা এই বাংলাদেশ পেয়েছি সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ৭৫’র ১৫ আগস্টের ঘাতকের বুলেটে নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতু নির্মাণের সময় আমাদের অনেক ষড়যন্ত্র পোহাতে হয়েছে। অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে আমার ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল, শেখ রেহানা, রেদোয়ান মুজিব, সাবেক যোগাযোগমমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনাতার পরে জাপান গিয়েছিলেন, তখন তিনি জাপান সরকারকে যমুনায় সেতু নির্মাণ করে দেয়ার অনুরোধ করেন। এরপর জাপান সরকার সেতু নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি করে। এরপর ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর সেতু বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের সৌভাগ্য, ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পরে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করি। তখন আমি আবার জাপানকে বলি- আমার বাবা যমুনা সেতু চেয়েছিলেন, আপনারা করে দিয়েছেন। আমাদের পদ্মায় একটি সেতু করে দেন। তখন জাপান রাজি হয় এবং ফিজিবিলিটি স্টাডি করে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালের মাঝামাঝি পদ্মার নদীর উপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার কাজ শেষ করে জাপান। স্থান-নির্বাচন করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ। এদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। এদেশের কল্যাণে আমি কাজ করবই। যখন সবাই সড়ে যায় তখন আমি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম- পদ্মা সেতু আমরা করব এবং নিজস্ব অর্থায়নে করব। তিনি বলেন, মানুষের শক্তিই বড় শক্তি। আর মানুষের সেই শক্তি দিয়েই আমরা পদ্মা সেতু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার জানেন পদ্মা কোন সাধারণ নদী নয়। পদ্মা আমাজনের পরে বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী। এই নদী আনপ্রেডিকটেবল মানে অনঅনুমেয়। সেই নদীতে সেতু নির্মাণ ছিলো বড় চ্যালেঞ্জ।

পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে দেশ বিদেশে। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অগ্রগতি স্থবির হয়ে যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অনেকে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বসে পড়েনি। অমরা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মোকাবেলা করে টিকে আছে। বাংলাদেশ আজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে আমরা প্রমাণ করেছি, আমরাও পারি। পদ্মা সেতু তাই আত্মমর্যাদা ও বাঙালির সক্ষমতা প্রমাণের সেতু শুধু নয়, পুরো জাতিকে অপমান করার প্রতিশোধও। বাংলাদেশের জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই। আমি আশা করি, যারা পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। প্রধানমন্ত্রী আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, আমি বিশ্বার করি আমার বাবা-মায়ের হাত আমার মাথার উপর রয়েছে। আমার বাবা-মা আমার জন্য দোয়া করছেন। নাহয় আমার মতো একটা সাধারণ মেয়ে এতো কিছু করতে পারত না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পদ্মা সেতু আশ্চর্য্য সৃষ্টি। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এই সেতুর পাইল বসানো হয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এ রকম আরো বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে এই সেতুর নির্মাণ পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে প্রকৌশলবিদ্যার পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে- এটা নিশ্চিত। তিনি বলেন, এ সেতু নির্মাণের কাজ করে আমাদের দেশীয় কর্মকর্তারা আরো দক্ষ হয়ে উঠেছে। এ দক্ষতা দেশে বিদেশেও কাজে লাগবে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ