ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে মধ্যরাত পর্যন্ত বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অবস্থান করায় ক্লাবের সভাপতি বিএনপি সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষক এবিএম ওবায়দুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভীকে গত রোববার (১৯ জুন) রাত ১১টা ১৭ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে প্রবেশ করে রাত একটা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ ঘটনা অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।‘রাজনৈতিক একজন নেতার সঙ্গে ক্লাবে বৈঠক করার বিষয়ে’ জানতে চেয়ে ওই অধ্যাপককে শোকজ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে ক্লাবের সদস্য ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছারকে আহ্বায়ক করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে কারণ দর্শানো নোটিশ জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সরকার সমর্থক নীল দলের সিনেট সদস্য অধ্যাপক আব্দুর রহীম। তিনি জানান, অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ক্লাবের কার্যকরী পরিষদ।
রাকসুর সাবেক ভিপি রিজভীর ক্লাবে আসা নিয়ে অধ্যাপক ওবায়দুল বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক বৈঠক নয়, আমরা একসঙ্গে বসে খাবার খেয়েছি, আড্ডা দিয়েছি। ক্লাবের যে কোনো সদস্যের সঙ্গে দুই, চার-পাঁচজন অতিথি আসতে পারে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেউ গোপন বৈঠক করতে কি ক্লাবে আসবে? যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ আছে এবং অতিথিরা তাদের স্ত্রীদের নিয়ে এসেছিলেন। কেউ যদি গোপন বৈঠকের পরিকল্পনা নিয়ে আসেন, তাহলে কি স্ত্রীদের নিয়ে আসবেন? আমরা যখন ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন অন্য রুমে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরাও ছিলেন।
ক্লাবের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী রোববার রাত ১১টা ১৭ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে রাত ১টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। তখন সেখানে ক্লাবের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলামসহ আরও ১০ থেকে ১২ জন ছিলেন।
এ বিষয়ে রিজভী বুধবার (২২ জুন) নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের প্রমোশন জোনে পরিণত হয়েছে।
ওই দিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত ১৮ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ইউট্যাবের একটি ঘরোয়া দাওয়াতে আমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও তিনজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলাম। আমন্ত্রিত অতিথিসহ সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ জন উপস্থিত ছিলেন। এখানে যদি নাশকতার কোনো পরিকল্পনা করা হতো, তাহলে সিসিটিভির ক্যামেরার আওতার মধ্যে কীভাবে আমরা ডাইনিং কক্ষে গিয়ে বসলাম? সেখানে অনেকেই সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। এটিকেই এখন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি নিষিদ্ধ কোনো দ্বীপ নাকি যে, সেখানে কোনো রাজনীতিবিদ যেতে পারবেন না। আমরা কেউ আমাদের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারব না।
এদিকে রিজভীর সঙ্গে সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের বৈঠককে ‘রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সমাবেশ থেকে রিজভী ও অধ্যাপক ওবায়দুলকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সমাবেশে মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সিসি টিভির ফুটেজগুলো দেখে অবিলম্বে এই গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে এসে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রকৃত তথ্য জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ