কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে।
এছাড়াও আজ পাঁচটি পৌরসভা, চারটি উপজেলা পরিষদ এবং দেড় শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদের ভোটও অনুষ্ঠিত হবে।
কুসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে বাড়তি পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। ভোটকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় বাড়তি সতর্কতা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার কুমিল্লা জিলা স্কুলের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তন থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম বিতরণ করা হয়। ট্রাকে করে সকাল থেকে এই বিতরণ কার্যক্রম চলে। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে নিয়োগকৃত ১০৫ জন প্রিসাইডিং অফিসারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়।
সোমবার রাত ১২টায় প্রচারের সময় শেষ হয়। এছাড়া ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত কোনও প্রকার মিছিল, বিজয় মিছিল, মশাল মিছিল, র্যালি, শোভাযাত্রা করা যাবে না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বৈধ অস্ত্র বহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে ১৭ জুন পর্যন্ত।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে মেয়র পদে ছয় জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুই বারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ প্রার্থী।
এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী আছে ভোটের মাঠে। এ নির্বাচনে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দু'জন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ নারী ভোটারসহ ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এবার এ নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী, ৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ নারী কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ২৫টি ওয়ার্ডে ১০৮ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২টি ওয়ার্ড ৫ ও ১০নং ওয়ার্ডে একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জেলায় এক হাজার ২৬০ আনসারসহ ৩ হাজার ৬০৮ জন পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৭৫টি চেক পোস্ট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৯ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১৫ প্লাটুন বিজিবি এবং র্যাব নিয়োগ করা হয়েছে। কুসিক নির্বাচনের সবগুলো কেন্দ্রেই বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া পাঁচটি পৌরসভা নির্বাচনও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে। সব মিলিয়ে মোট এক হাজার ৪৪০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের প্রবেশ পথে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির অধীনে এটিই প্রথম নির্বাচন। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা বারবার বলছেন আগের চেয়ে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন। তাই সবার আগ্রহে পরিণত হয়েছে আজকের নির্বাচন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৭ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল দুই লাখ সাত হাজার ৫৬৬ জন। ভোট পড়েছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৬৯০। এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট, আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানার নৌকা পেয়েছিল ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। এর আগে সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর ২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান। সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন মনিরুল হক সাক্কু।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ