মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কুমিল্লায় হ্যাটট্রিক নাকি অভিষেক

প্রকাশনার সময়: ১৫ জুন ২০২২, ০৫:৪৬

রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ ভোট। এ ভোটকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও ভোট সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তৎপর।

কুসিক নির্বাচন ঘিরে সবার দৃষ্টি এখন সেখানে। যে কোনো নির্বাচনের তুলনায় বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার আউয়াল কমিশনের অধীনে বড় কোনো নির্বাচন এটি। তাই এই নির্বাচনে কোনো ধরনের ফাঁক রাখতে চাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন।

তৃতীয়বারের মতো হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট। ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। ভোট নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোটাররা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সদ্য সাবেক মেয়র বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল ইসলাম সাক্কুর হ্যাটট্রিক বিজয় না কি প্রথমবার জয়ের মুকুট আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের নিশ্চিত হবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বুধবার রাতে ভোটের ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত।

এবার কুমিল্লা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ৫ জন। মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন- কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), টানা দুইবারের সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)। এদের মধ্যে প্রথম তিন প্রার্থী বেশ আলোচিত। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ১০৮ জন প্রার্থী।

এদিকে এখনো পর্যন্ত কোন নির্বাচনে হারেননি মনিরুল হক সাক্কু। হ্যাটট্রিক বিজয়ের প্রত্যাশা করছেন তিনি। ২০০৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। এরপর ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি মেয়র হিসেবে বিজয়ী হন। এবার তিনি স্বতন্ত্রভাবে সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হন। সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মনিরুল হক সাক্কু।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবারই প্রথমবারের এমন পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ১৯৮১ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের বহিঃক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচন করে জয়ী হন। তিনি কুমিল্লা ক্লাবে সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে একাধিকবার জয়ী হন। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি তার প্রথম নির্বাচন। রিফাত বলেন, ‘প্রথমবার নির্বাচন করছি। জনগণ আমার পক্ষে রায় দেবেন। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’ আরেক তরুণ প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সারও বেশ সাড়া ফেলেছেন ভোটারদের মাঝে।

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, সাক্কুর ধারাবাহিক বিজয়ের পেছনে একটি বড় কারণ ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন্দল। এর একদিকে ছিলেন আফজল খান, অন্যদিকে এমপি বাহার। বাহারই সাক্কুকে বিজয়ী করার ক্রীড়নক ছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এমপি বাহারের স্নেহধন্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিফাত এবার পেয়েছেন নৌকা প্রতীক।

অন্যদিকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন বাহারের প্রতিপক্ষ আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। আফজল খানের পরিবারের একটি বড় বলয় কুমিল্লায় এখনও বিদ্যমান। রিফাতের মনোনয়নে ক্ষুব্ধ এই পরিবার। নির্বাচনেও তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

মনোনয়নবঞ্চিত অন্য ১১ জনেরও নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার আন্তরিকতা নিয়ে ঘাটতি অনেকটাই স্পষ্ট। এসব কারণ সাক্কুর জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির পদ থেকে বহিস্কৃত হয়ে নির্বাচনী মাঠে টিকে থাকা কায়সার তার মাথাব্যথার বড় কারণ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পৌরসভা-সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালনকালের নানা ক্ষোভও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপির কোন্দল ও দল থেকে বহিস্কার হওয়ার কারণে বিএনপিরও তেমন কেউ সাক্কুর পাশে নেই। এসব উপাচার রিফাতের বিজয়ের জন্য বড় সুবিধা বয়ে আনতে পারে। এ হিসেবে ঘড়ি-ঘোড়ায় কাটাকাটি হলে নৌকাই সুবিধা পেতে পারে।

রিফাতের অভিযোগ, কালো টাকার মালিক সাক্কু টাকা ছড়িয়ে সাধারণ ভোটারসহ আওয়ামী লীগ নেতাদেরও কেনার চেষ্টা করছেন।

আর সাক্কুর অভিযোগ, বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে ভোটের মাঠে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন রিফাত।

নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা বাহারকে এলাকার বাইরে পাঠাতে পারেননি। সংবাদ সম্মেলন করে একই অভিযোগ করেছেন কায়সারও।

তাদের অভিযোগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।

তবে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, নির্বাচনকে ‘সুষ্ঠু করতে’ যাবতীয় ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার ২৬০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ হাজার ৪৬০ জন পুলিশ, ২৪০ জন বিজিবি সদস্য, র‌্যাবের ৩০টি টিমে ২৫০ জন, ১০৫ কেন্দ্রে ১ হাজার ২৬০ জন আনসার, এপিবিএনের ৯টি গ্রুপে ৫০ সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। এ ছাড়া ১১০ জন তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীকেও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। তিনি বলেছেন, সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ