চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন বুধবার (৮ জুন) পুরোপুরি নিভেছে। তবে কিছু ধোঁয়া বের হচ্ছে। আগুনে ৪০০ কনটেইনার ধ্বংস হয়েছে।
ডিপোর সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল বলেন, ডিপো কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করেছি আগুন যাতে না বাড়ে। এছাড়া নতুন করে যেন কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি ছিল আমাদের। যে কনটেইনারগুলোতে আগুন লেগেছিল তার পাশে কিছু অক্ষত কনটেইনার ছিল এগুলোকে আমরা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে এসেছি। আগুন লাগার বড় কারণ ছিল এখানে কিছু রাসায়নিক কনটেইনার ছিল। রাসায়নিক সবগুলো কনটেইনারকে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি এবং সেগুলোকে পৃথক করে ফেলেছি। এ কারণে আগুন বাড়েনি। শনিবারের (৪ জুন) পর আর কোনো বিস্ফোরণ হয়নি, আশা করছি নতুন করে আর কোনো ধরনের বিস্ফোরণ হবে না। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর কারিগরি একটি টিম ডিপোতে কাজ করছে। আর কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, প্রায় ৩০টির মতো কনটেইনারে রাসায়নিক আছে। তবে তারা সংখ্যাটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি। তারা আজকের মধ্যে তা আমাদেরকে জানাবে। সবাই মিলে সরেজমিন পরিদর্শন করে যেগুলোকে মার্ক করতে পেরেছি সেগুলোকে পৃথক করেছি। কিছু কনটেইনার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ডেমেজ হয়ে গেছে। সেগুলোকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। সেগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
ডিপোটি এখনও পুরো ঝুঁকিমুক্ত বলছি না উল্লেখ করে আরিফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় হয়ে গেছে, তাই বলতে পারি ঝুঁকির পরিমাণটা কমে গেছে। এর ভেতরে যেহেতু নতুন করে বিস্ফোরণ হয়নি, নতুন করে আর বিস্ফোরণ হবে না বলে আশা করি।
তিনি বলেন, ডিপোতো এখন আর আগুন জ্বলছে না, তবে কিছু ধোঁয়া বের হচ্ছে। এখানে গার্মেন্ট পণ্য আছে। এগুলোতে পানি দেওয়ার পর ধোঁয়া বের হচ্ছে। কিন্তু ডিপোর ভেতরে কোনো আগুন জ্বলছে না।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল বলেন, পুরো ডিপোটি আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি, ঘুরে দেখেছি। নতুন করে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। ডিপোতে বিভিন্ন কনটেইনার দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এগুলোর সবগুলো উদ্ধার করতে পারিনি। ক্রেনের সাহায্যে এগুলো সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এগুলো সরানো হলে পরিস্থিতি বোঝা যাবে। তবে কোনো মরদেহ নেই বলে আমরা মনে করছি।
ডিপোটিতে চার হাজার ৪শ কনটেইনার ছিল। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে বলতে পারি ৪০০ কনটেইনার ধ্বংস হয়েছে। তবে ফাইনাল রিপোর্ট কোঅরডিনেট সেলের মাধ্যমে জানা যাবে। আমরা কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে দ্রুত ডিপোটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর প্রথমে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রথমে সেফটি নিশ্চিত করতে সময় নিয়েছি। তাই উদ্ধার কাজে কিছুটা সময় লাগছে। ধোঁয়া নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নতুন করে কোনো রাসায়নিক কনটেইনার পাওয়া যায়নি।
এর আগে শনিবার (৪ জুন) রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকার বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ৪৪ জন নিহত হন। কয়েকশ মানুষ দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় মঙ্গলাবার (৭ জুন) রাতে আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- বিএম কন্টেইনার ডিপো লিমিটেড এর ডিজিএম নুরুল আক্তার, ম্যানেজার অ্যাডমিন খালেদুর রহমান, সহকারী অ্যাডমিন অফিসার আব্বাস উল্লাহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ, কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন নজরুল ইসলাম ও বিএম কন্টেইনার ডিপো লিমিটেডের জিএম নাজমুল আক্তার খান।
সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় দুর্ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত কারণ উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ