রাজধানী ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের আরেকটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এবার তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সদস্য মনিরুজ্জামান খোকনের ২৭ মিনিট ৩ সেকেন্ডের কথোপকথন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) থেকে উভয়ের এই ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ফোনালাপে অধ্যক্ষকে বলা হয়, ‘…কোর্টের চিন্তা করলে ভিকারুননিসায় প্রিন্সিপালগিরি করতে পারবেন না।’ এ সময় পুলিশ ও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে অধ্যক্ষকে ভর্তির জন্য কৌশলে চাপ সৃষ্টি করা হয়।
ফোনালাপের একপর্যায়ে গভর্নিং বডির সদস্য মনিরুজ্জামান খোকন অধ্যক্ষকে বলেন, ‘আমি কি একবারও বলেছি আমাকে দেন? আমরা যাদের কাছে কৃতজ্ঞ, বিভিন্ন সময় যাদের কাছে আমাদের যেতে হয় তাদের রিকোয়েস্ট রাখার সুযোগ আছে। এরা তো ভালো ফ্যামিলির বাচ্চা, এরা তো প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করবে। এটুকু দায়িত্ব যদি না নেন। আমরা তো আপনার পক্ষেই আছি। ইভেন মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে ফোন গেছে।’
খোকনের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, ‘স্যার (গভর্নিং বডির সভাপতি) তো সচিব স্যারের কাছে পাঠিয়েছেন। সচিব স্যার তো হ্যাঁ-না একটা কিছু নির্দেশ দেবেন।’
অধ্যক্ষের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে খোকন বলেন, ‘আরে সচিব স্যার কিছুই বলবে না। সচিব স্যারকে আমি দেড় বছর কাছ থেকে দেখেছি।’
একপর্যায়ে খোকন বলেন, ‘আমি কাছে থেকে চিনি তো, উনি (সচিব) কোনো দিনই হ্যাঁ বা না বলবেন না।… আমি কিন্তু রেজাল্টটা আপনাকে দিয়ে দিলাম। আপা আপনার টিঅ্যান্ডটি ফোন আছে না বাসায়? অনেক সময় টিঅ্যান্ডটিতে কথা বলা ভালো।’
এ সময় অধ্যক্ষ খোকনকে বলেন, ‘শোনেন, আমাকে দেখেছেন আমি কিন্তু মানুষটা দুই নম্বর বা জটিল এই টাইপের কিছু না।’
খোকন অধ্যক্ষকে বলেন, ‘সেটা আমি বুঝছি। আপা আমি বলি, আপনি একটা বাইন্ডিংসের মধ্যে আছেন সেটা আমরা বুঝি। কিন্তু বিষয়টা হলো কী, আপনি বিষয়টি আমাদের ওপর ফেলাবেন। এটা হলো প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে।’
শিক্ষার্থী ভর্তির প্রসঙ্গ টেনে খোকন বলেন, ‘…ক্লাস নাইনের বাচ্চাগুলোরে আপনি ভর্তি করালেন না, এটা কি ঠিক করছেন, বলেন?’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘এখন তো কোনো ভর্তি করা…।’
আগের ভর্তি প্রসঙ্গে খোকন বলেন, ‘…ক্লাস নাইনের ইংরেজি ভার্সনের কমার্সের সেকশনটা, প্লাস ক্লাস নাইনটায় ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি নেবেন না?’
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটা তো স্যার প্রতিবেদন চাইছে, প্রতিবেদন পাঠাইছি।’
খোকন বলেন, ‘ভর্তিটা প্রতিবেদন চাইলে কী হবে?’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘স্যার জানতে চেয়েছে, এখানে অসুবিধা কী?’
খোকন বলেন, ‘কিন্তু এপ্রিল মাস শেষ হয়েছে, কবে দেবেন সার্কুলার?’
এর আগে, অভিভাবক ফোরামের উপদেষ্টা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর সঙ্গে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এর অধ্যক্ষ জানিয়েছিলেন, ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সুপার এডিট করে ফোনালাপের একাংশ ফাঁস করা হয়েছে। ওই ফোনালাপের অশালীন কথাবার্তার জন্য নেতিবাচক আলোচনার মুখোমুখি হন অধ্যক্ষ।
ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সদস্য মনিরুজ্জামান খোকন বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে অধ্যক্ষের সঙ্গে যেসব কথা বলেছিলাম, তা রেকর্ড করেছিলেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের লোকরাই এটি ফাঁস করেছে। এই ফাঁসে আমার কোনো হাত নেই।’
তবে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ