ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাবধান, ঈদ বাজারে জাল টাকার নোট

প্রকাশনার সময়: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৯:০৪

সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে জাল টাকা। এই জাল টাকার তৈরীর কেন্দ্র হলো ঢাকা শহর। কারণ জাল টাকার কারবারিরা এ শহরকেই নিরাপদ মনে করে। কয়েক মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে তাদের টার্গেট পূরণ হলেই ফের অন্যত্র বাসা ভাড়া নেন।

তবে জাল টাকা রাজধানীতে বসে তৈরি করলেও এর বাজারজাত করা হয় সীমান্ত এলাকা এবং সীমান্ত এলাকার বাজারগুলোতে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃত জাল টাকা তৈরির হোতারা।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর লালবাগের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে দলনেতা তাইজুল ইসলাম লিটনসহ চার জনকে গ্রেফতার করে। অন্য তিন জন হলো জাহাঙ্গীর আলম, আলী হায়দার ও মহসিন ইসলাম মিয়া। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে লিটনের বাড়ি চাঁদপুরে। জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নওগাঁ এবং আলী হায়দার ও মহসিন মিয়ার বাড়ি বরিশালে।

গোয়েন্দা পুলিশ তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তারা জানিয়েছে জাল টাকা তৈরির বিস্তারিত। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের জাল নোট। জাল রুপিও উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া জাল টাকা ও রুপি তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন কালারের কালি, স্ক্রিন ফ্রেইম, বিশেষ ধরনের কাগজ, কেমিক্যাল, স্ক্যানার মেশিন, কাটার, স্কেল ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, জাল নোট তৈরির কারিগর লিটন জানিয়েছে, জাল নোট তৈরিতে যা যা লাগে যেমন: কাগজ, সুতা, রং, কেমিক্যাল, জাল ছাপের প্রিন্টার—সবই তার কাছে আছে। জাল ছাপ দিয়ে কীভাবে নোট তৈরি করতে হয় তা তার জানা। বিশেষ ধরনের কাগজ কিনে জোড়া লাগানো, একটি কাগজে বঙ্গবন্ধু বা মহাত্মা গান্ধীর ছবি স্ক্রিন প্রিন্টিং বা জলছাপ দেওয়ায় বিশেষ পারদর্শী সে। জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগেও গ্রেফতার হয়েছিল। তিন বছর জেল খাটার পর আবারও জাল নোট তৈরিতে জড়িয়ে পড়ে। বেশি লাভের আশায় সে এই কাজ করে আসছিল। ডিলারদের মাধ্যমে এই নোট বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিত।

লিটন জানায়, জাল টাকা তৈরি করার পরে ১২ হাজার-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। জাহাঙ্গীর এবং মহসিন মূলত লিটনের কাছ থেকে জাল টাকা ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় কিনে সচরাচর ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করে। জাহাঙ্গীর নওগাঁ, নাটোর, বগুড়াসহ দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলের অনেকগুলো ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। খুচরা বিক্রেতাসমূহ শহরের ব্যস্ততম এলাকায় রেস্টুরেন্ট প্রসাধনী, পরিধেয় বস্ত্র ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ভালো টাকার ভেতরে জাল টাকা ঢুকিয়ে দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে লিটন আরো জানায়, এই কাজের সঙ্গে সে ১২ বছর ধরে জড়িত। কামরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি নীলক্ষেতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করার সময় পাসপোর্ট এডিটিংয়ের কাজ দিয়েছিল তাকে। সে কাজটি সঠিকভাবে করতে পারার পরে ঐ ব্যক্তি তাকে জাল নোট তৈরির কাজের অফার দেয়। সেই থেকে জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরি করতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বিভিন্ন হাত ঘুরে এসব জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। জাল নোট বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু ডিলার।

জাল রুপি কীভাবে ভারতে যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে না পারলেও লিটন কয়েক জনের বিষয়ে গোয়েন্দাদের তথ্য দিয়েছে। রাজশাহীর বশির খসরু, গোপালগঞ্জের জামিল, পঞ্চগড়ের মোস্তফা, মানিকগঞ্জের নাজমুলসহ রাজধানীর বেশ কয়েক জন ডিলার এ টাকা সরবরাহ করত। তারাই জাল রুপি ভারতে নিয়ে যেত।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ