নদীদূষণমুক্ত করে পানিপ্রবাহ বাড়ানো না গেলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে পানির অভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে ঢাকা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখনই সমন্বিত কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদে ‘ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা) ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে এ সভা হয়। সভা সঞ্চালনা করেন বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকায়ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভীতিকর গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। ১৯৭০ সালে ৪৯টি গভীর নলকূপ ছিল ঢাকা মহানগরীতে। এখন ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় সুপেয় পানির চাহিদার শতকরা ৭৮ ভাগ গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ থেকে উত্তোলন করছে ওয়াসা। এতে ৯০০টি নলকূপ ব্যবহার হচ্ছে। নদীর পানি দূষিত হওয়ার অজুহাতে ওয়াসা একের পর এক নলকূপ বসিয়ে যাচ্ছে। অথচ ওয়াসাকে নদীর পানি দূষণরোধে কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
সভায় জানানো হয়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। ফলে বেড়েই চলছে নদীদূষণের মাত্রা। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ত পানি উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীদূষণমুক্ত ও পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি করা না হলে এবং বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে পানির অভাবে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক কালে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের বর্ধিত আনাগোনা ও প্রচণ্ডতায় বাংলাদেশের জনজীবন, কৃষি, ভৌত অবকাঠামো অহরহই বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে বলে সতর্ক করেন পরিবেশবিদরা। তারা বলেন, ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের ১৮ শতাংশের বেশি ভূমি পানির নিচে স্থায়িভাবে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালীর দুই কোটি মানুষ জলবায়ুর প্রভাবে উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পবার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান, বানিপার সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, পবার সদস্য তোফায়েল আহমদ, দেবীদাস ঘাট সমাজকল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসা, মৃত্তিকার সমন্বয়ক খাদিজা খানম, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রজেক্ট অফিসার পদ্মা সাহা, নাসফের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, কবি ও লেখক কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসিবুল হক পুনম, জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহদফতর সম্পাদক হারুনুর রশিদ সুমন প্রমুখ।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ