ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেইসবুক লাইভে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে কেন?

প্রকাশনার সময়: ১২ মার্চ ২০২২, ১৬:২৫

গত কয়েক মাসে ফেসবুক লাইভ ও মেসেঞ্জারে ভিডিও কল করে আত্মহত্যা করেছে অন্তত ৫ জন। সর্বশেষ গতকাল (১১ মার্চ) সকালে বরগুনায় এক কলেজছাত্রী ভিডিও কলে প্রেমিককে রেখে গলায় ওড়না লাগিয়ে ফাঁস দেয়। এর আগে খুলনার এরশাদ সিকদারের মেয়ে নওরিন এশা নামে এক তরুণী রাজধানীর গুলশানের একটি বাসায় বসে প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করে। তার আগেও গত এক ফেব্রুয়ারি আবু মহসিন খান নামে রাজধানীর একজন ব্যবসায়ী ফেইসবুক লাইভে এসে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলার পর নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এসব ঘটনাগুলো সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।

শুধু এ ঘটনাই নয়। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বিষপান করেছেন। ভারতের উত্তর প্রদেশের বাঘপাতে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্বামী প্রাণে বেঁচে গেলেও মৃত্যু হয়েছে স্ত্রীর। শুধু তিনি নন, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় মাসে আরো তিনজন ফেইসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেছেন। গত বছরের ১৭ আগস্ট মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের গয়ঘর এলাকায় সুমন নামের এক যুবক ফেইসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। তার এ মৃত্যুর জন্য তিনি কাউকে দায়ী করেননি।

এ ছাড়াও গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে ফেইসবুক লাইভে এসে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন পুবাইলের স্বপন চন্দ্র দাস নামের এক ব্যবসায়ী। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর সবুজ সরকার নামে কুমিল্লার এক তরুণ সৌদি আরবে ফেইসবুক লাইভে এসে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

মেধাবী ছেলে ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি, ব্যবসা ডুবেছে, প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছে, ভালো পড়াশোনা করা সত্ত্বেও যোগ্য ব্যক্তি তার উপযুক্ত চাকরি পাচ্ছেন না বা কর্মক্ষেত্রে যথাযথ মর্যাদা বা স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ব্যক্তিগত জীবনে অপ্রাপ্তি, পারিবারিক অশান্তি চলছে– ইত্যাদি নানা কারণ থেকে মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ইদানীং বয়স্কদের মধ্যেও একাকিত্ব থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এমনও বহু মানুষ আছেন যাদের পরিবারে মানসিক সমস্যার থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, ইদানিং কেন এভাবে ফেসবুকে জানান দিয়ে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে? এর পেছনের কারণ কী?

ফেইসবুক লাইভে আত্মহত্যার প্রবণতা এত বাড়ছে কেন?

পশ্চিমা বিশ্বে কিন্তু এমন আত্মহত্যার প্রবণতা নেই। কিন্তু আমরা যারা উন্নতির দিকে যাচ্ছি, জীবন জটিল হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক কারণ, সামাজিক কারণ। সব মিলিয়ে আমাদের অঞ্চলে কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

কারণ ১

আত্মহত্যার সঙ্গে ফেসবুক লাইভ জড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধাণ কারণ হচ্ছে আত্মতহ্যার কারণ উপস্থাপন করে যাওয়া। আগে যা লিখে আত্মহত্যা করত, এখন তা বলে আত্মহত্যা করে।

কারণ ২

ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যার আরেকটি কারণ হচ্ছে, কেউকে দোষারোপ করে আত্মহত্যা করা। অথবা আত্মহত্যার দায় থেকে সবাইকে মুক্ত রাখা।

কারণ ৩

লাইভে আত্মহত্যার আরেকটি কারণ, সমাজকে শিক্ষা দেওয়া। অনেকেই মৃত্যুর আগে দেশ বা তার সমাজকে একটি ম্যাসেজ দিতে চায়। ব্যক্তির ইচ্ছে হয়, মরে যাওয়ার আগে সমাজের ভুলটা শুধরে যেতে।

আত্মহত্যার ৭০ ভাগ কারণ হলো মনোরোগ। বিষণ্ণতা আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাতে মানুষ অসহায়বোধ করে। জীবনের প্রতি তার কোনো মায়া থাকে না। বিষণ্ণতায় আত্মহত্যার হার বেশি। এ ছাড়া সিজোফ্রেনিয়া নামে একটি কঠিন মানসিক রোগ রয়েছে। তাতেও অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার ইচ্ছা জন্ম নেয়। এক কথায় বলতে হলে মানসিক চাপ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অবসাদ ও হেনস্থার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ