দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তেল সেক্টরের একাধিক কর্মকর্তার ব্যাপারে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের পক্ষ থেকে গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনস্ত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানিতে পৃথক চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়।
জানা যায়, পদ্মা অয়েলের বর্তমান এমডি মো. মাসুদুর রহমান আগে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। পরে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। মূলত এই কারণেই তিনটি তেল কোম্পানির নিকট তার ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক প্রবীর কুমার দাশ জানান, সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে দেয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু কাগজপত্র পেয়েছি। চট্টগ্রাম গিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করা হবে।
তিনি জানান, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এ ব্যাপারে তথ্য চেয়ে দুদক থেকে চিঠি দেওয়া হয়। পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান এবং ডিজিএম (হিসাব) কাঞ্চন চন্দ্র সেন দায়িত্বকালীন পদ্মা অয়েল কোম্পানির নামে কোন কোন ব্যাংকে এফডিআর হিসাব পরিচালনা করা হচ্ছে, এফডিআর খোলার তারিখ, সময়কাল এবং এফডিআর বাবদ শতকরা কত সুদ গ্রহণ করা হয়েছে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে— কাঞ্চন চন্দ্র সেন দায়িত্বে থাকাকালীন বিভিন্ন ব্যাংকে কোম্পানির ফিক্সড ডিপোজিটের মাধ্যমে কমিশন আদায় করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে— ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া তিনি বিদেশে যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে সখ্যর কারণে গত কয়েক মাস পূর্বে তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
যমুনা অয়েল কোম্পানির নিকট দেওয়া চিঠিতে মাসুদুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তেল আমদানি ও খালাস এবং অপারেশন কার্যক্রমের বিষয়ে তথ্য প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। তাছাড়া পদ্মা অয়েল কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক (অ্যাভিয়েশন) সাইদুল হককে দায়িত্বে থাকাকালীন সেলারি সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়। চাঁদপুর ডিপোতে দায়িত্বে থাকাকালীন সাইদুল হককে বিভিন্ন অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহের কোনো প্রকার সুরাহা না করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান তাকে পদোন্নতি দিয়ে উপব্যবস্থাপক করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানের ব্যাপারে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, তিনি সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। দুদক চেক করে দেখুক। কোনো অসুবিধা নেই। তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে বেনামে অভিযোগ দেয়া হলে মন্ত্রণালয় থেকে তা দুদকে পাঠানো হয়েছে। সাইদুল হকের ব্যাপারে তিনি জানান, ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ মিমাংসা হয়ে গেছে। কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তেল সেক্টরের আরো একাধিক কর্মকর্তার ব্যাপারে দুদক পৃথক অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন সময় অভিযুক্তদের ব্যাপারেও দুদকের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ