ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সিমেন্টের দামও ঊর্ধ্বমুখী

প্রকাশনার সময়: ১০ মার্চ ২০২২, ০৮:৩১ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২, ০৮:৪১

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অস্থির আন্তর্জাতিক বাজার। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিমেন্টের কাঁচামালের দাম। পাশাপাশি জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে উৎপাদনের খরচ। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ২০-৫০ টাকা বাড়িয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি। প্রতি বস্তা সিমেন্ট উৎপাদনে ৬০-৭০ টাকা খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন উৎপাদনকারীরা।

আন্তর্জাতিক বাজারে ক্লিংকার প্রস্তুতে ব্যবহূত জ্বালানি কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্লিংকারের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। হঠাৎ করেই চীন কয়লার আমদানি বাড়ানোর ফলে দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এফওবিতে বা উৎপাদন পর্যায়ে যেখানে প্রতি টন কয়লার মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৪২ ডলার, তা এখন দাঁড়িয়েছে ৮২ ডলারে। এসব কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের অন্যতম মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েই চলেছে, যার প্রভাব দেশীয় সিমেন্ট খাতেও পড়ছে। সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, এ খাতের সব কাঁচামালই আমদানিনির্ভর। বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। জাহাজের জ্বালানি (মেরিন ফুয়েল) টনপ্রতি বেড়েছে ৫০ শতাংশ। সিমেন্ট উৎপাদনে প্রধান পাঁচটি কাঁচামাল হলো— ক্লিংকার, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম। মূলত সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহূত ক্লিংকারের দাম আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সিমেন্টের দামের ওপর। ক্লিংকারের দাম গত এক মাসে প্রতিটনে বেড়েছে ৯ ডলার বা ৭৬৫ টাকা। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেও প্রতি টনে ৪ ডলার বেড়ে ক্লিংকারের দাম উঠে ৪৬ ডলারে। বর্তমানে ক্লিংকারের দাম ৬০ ডলার থেকে বেড়ে এক লাফে উঠেছে ৭৫-৭৯ ডলারে। মূল্যবৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে সিমেন্টের দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তারা।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির হিসাবে, বর্তমানে দেশে ৩৭টি সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। গত ৬ বছরে সিমেন্ট বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০১৫ সালের তুলনায় সে বছর ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। এরপর ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সিমেন্ট বিক্রি বেড়েছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। সে বছর দেশে ৩ কোটি ১৩ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রি হয়। অর্থাৎ ১ বছরে বাড়তি ৪৩ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রি হয়ে। ২০২০ সাল বাদ দিলে বছরে গড়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই খাতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রধান উপকরণের মধ্যে আছে সিমেন্ট, রড, পাথর ও ইট। আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে সামনের দিকে এসব নির্মাণ উপকরণের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও বাড়বে। ঢাকায় ছোট-বড় শিল্প-কারখানা স্থানান্তর হবে। নতুন কারখানা হবে। এই উপকরণের দাম যদি অস্থিতিশীল হয়, তাহলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হবে। এরই মধ্যে রডের দাম বাড়ায় দেশে জরুরি ছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে অবকাঠামো নির্মাণে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম ১২৫ ডলারের ওপরে উঠলে জাহাজভাড়াসহ শিপিং ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েছেন উৎপাদকরা।

খুচরা বাজার পরিদর্শন করে দেখা যায়, সব কোম্পানির সিমেন্টের দাম এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ টাকা। শাহ স্পেশাল ৪২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সুপারক্রিট ৪২০ থেকে বেড়ে ৪৪০ টাকা, স্ক্যান সিমেন্ট ৪৫০ থেকে বেড়ে ৪৭০ টাকা, বেঙ্গল ৪১০ থেকে বেড়ে ৪৩০ টাকা, মীর ৪০৫ থেকে বেড়ে ৪২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, নির্মাণ কাজে ব্যবহারযোগ্য সব জিনিসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারো বাড়ল সিমেন্টের দাম। বস্তাপ্রতি বাড়ানো হয়েছে ২০-৫০ টাকা। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। গত বছর বাড়ার পাশাপাশি এ বছরের শুরুতে ফের বাড়ল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সামনের দিকে আবার বাড়বে কিনা তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) এর সভাপতি আলমগীর কবির বলেন, করোনা পরবর্তীতে পশ্চিমা দেশগুলোতে পুরোদমে অবকাঠামো উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। এশিয়া অঞ্চলে নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু করোনার সময়ে নির্মাণ সামগ্রী সিমেন্টের কাঁচামাল তেমন উৎপাদন হয়নি। যার ফলে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে একটি বড় ধরনের গ্যাপ তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো দেশ প্রয়োজনীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বেশি দামে নির্মাণ সামগ্রীর কাঁচামাল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদিত নির্মাণ-সামগ্রী ক্রয় করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় এখন দেশে প্রস্তুত সিমেন্টের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে দ্বৈত কর সমন্বয় করা উচিত।

তিনি আরো বলেন, আমদানি পর্যায়ে নির্ধারিত শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২৫০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। নির্মাণ খাতের অন্যতম উপকরণটির কারণে যাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য করভার কমাতে হবে। একই সঙ্গে দাম সহনীয় রেখে যদি বিক্রি বাড়ে, তাহলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ