জীবনযাত্রায় মানুষের ব্যয় বেড়েছে অনেক। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে বাড়েনি আয়। সামনে রমজানকে ঘিরে বাজারে শুরু হয়েছে মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রকার চুলচেরা অবস্থা। ফলে টিসিবির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। আগে স্বল্প আয়ের মানুষ শুধু টিসিবির কথা ভাবত। এখন তা সবারই নজর টিসিবির ওপর। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের সঙ্গে এখন উচ্চমধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়িয়ে কিনছে ভোজ্যতেল।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলা রোডে গিয়ে দেখা যায় টিসিবির ট্রাকের সামনে লম্বা লাইন। এর মধ্যে কথা হয় লাইনে দাঁড়ানো মোছা. নাছিমা বেগম (৬০) সঙ্গে।
তিনি নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘সামনে মাসে রোজা চলে আইচে খামু কী, বাজার করমু কী, টেকা পামো কই। স্বামী সন্তান নিয়ে বড় কষ্টে আছি। আমগো কষ্ট দেখার কেউ নাই। তাই টেকা বাঁচাতে লাইনে দাঁড়াইছি বাবা। কী করমু গরিব মানুষ দু’বেলা তো খাওন লাগবো’।
তিনি আরো বলেন, ‘করোনার সময় খুব কষ্টে বাড়ি ভাড়া আর দু’বেলা খাওন জোগাইছি। তারপরও কোনো বেলা না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে। স্বামী-সন্তানদের খাওন দিয়ে যেটুকু বাকি রইছে সেটুকু খেয়ে রাত পার করছি এমনো দিন লকডাউনে পার করছি। স্বামী এখন যা আয় করে তার অর্ধেকের বেশি চলে যায় বাজার খরচে। বাড়ি ভাড়া সন্তানদের পড়ালেখা তো আছেই। সামনে রমজান মাস চলে আইচে, তাই টিসিবি থেকে জিনিস কিনে রাখতেছি। বাজারে যে দাম কী কিনমু আর কী খামু।’
এদিকে রমজান সামনে রেখে টিসিবির পণ্য সরবারহ বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানকে সামনে রেখে ১ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্য পণ্য পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এর পাশাপাশি টিসিবির পণ্যের দিকে নজরদারি আরো বাড়ানো হয়েছে। কেননা, একটি চক্র একাধিকবার লাইন থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বাজারে গিয়ে বিক্রি করছে। ফলে সাধারণ মানুষ লাইনে থেকেও কিছু কিছু মানুষ পণ্য না পেয়েই চলে যেতে হয়।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান নয়া শতাব্দীকে বলেন, টিসিবির পণ্য আগে যেমন বিক্রি করা হতো ঠিক তেমনভাবেই বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে পণ্য বাড়ানো হবে এমন পরিকল্পনা নেই। ভোজ্যতেল অথবা অন্য কোনো পণ্য বেশি কিনতে পারবে এমনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। ফলে প্যাকেজেই থাকছে টিসিবির পণ্য।
টিসিবির মুখপাত্র হমায়ুন কবির বলেন, বাজারের তুলনায় টিসিবির পণ্যের মান ভালো এবং দাম অনেক কম হওয়ায় সাধারণ মানুষের লাইন বড় হচ্ছে। এই সুযোগে একটি চক্র একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। লাভের জন্য সেসব পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ শুনছি। এসব প্রতারকের ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় বাড়তি জনবল টিসিবির নেই।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ