ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুতে ৮০ হাজার কোটি টাকার অডিট আপত্তি

প্রকাশনার সময়: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৩০

বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে কেনাকাটায় চলছে নানা ধরনের অনিয়ম। এরই মধ্যে তিন হাজার ৫৯৭টি অডিট আপত্তির বিপরীতে টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ১৮৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। বিপুল পরিমাণ এই অডিট আপত্তি সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউই মুখ খুলতে রাজি নন।

পিডিবির সাবেক একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি আর কেনাকাটায় ঘাপলার কারণেই এত সব আপত্তি। প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পেই কিছু না কিছু দুর্নীতি আছে বা চলছে। তিনি বলেন, সঠিক মনিটরিং আর তদারকি না থাকায় যে যার মতো অনিয়ম করেই চলছে। সঠিক তদন্ত হলেই বেরিয়ে পড়বে সব থলের বিড়াল।

বিপিডিবির ২০২১ সালে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে মোট আপত্তির সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ১১৬টি। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থের পরিমাণ ৮৩ হাজার ১৬৩ কোটি ৮ লাখ ২৭ হাজার। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ১ হাজার ৫৬৯টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৭২০ কোটি ৮ লাখ ৫ হাজার। বর্তমানে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৩ হাজার ৫৯৭টি অভিযোগ, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ হলো ৮০ হাজার ১৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ৭৬ হাজার কোটি। প্রতিবেদনের বর্ণনা মতে, ১৯৭২ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে বাংলাদেশের উত্থানের পর দেশটির বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠিত পাবলিক সেক্টর প্রতিষ্ঠান বিপিডিবির আপত্তির সংখ্যা সর্বাধিক ১ হাজার ৪৩৯টি। যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি ৮ লাখ ৭৬ হাজার। সবচেয়ে কম একটি মাত্র আপত্তি পাওয়ার সেলের, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ৪ কোটি ৯৫ লাখ। পাওয়ার সেল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ সরকারের একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যা দেশে বিদ্যুৎ শিল্প নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়বদ্ধ। দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) আপত্তির সংখ্যা ৪৭০টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ৩০ হাজার ৪৪৬ কোটি ১৮ লাখ।

সরকারি মালিকানাধীন দেশের প্রথম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) অডিট আপত্তির সংখ্যা ৯৭টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ১৫৩ কোটি ৬৮ লাখ। প্রধানত ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানকারী সরকারি কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) অডিট আপত্তির সংখ্যা ৭২৯টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ৬ হাজার ৪৮৭ কোটি ৮০ লাখ। সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের (ইজিসিবি) আপত্তির সংখ্যা ৩০টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬৯২ কোটি ৩৮ লাখ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহায়ক সংস্থা ও দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) আপত্তির সংখ্যা ১৮৭টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ৩ হাজার ১২২ কোটি ৪৩ লাখ। বিদ্যুৎ খাতে অপেক্ষাকৃত নতুন সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) আপত্তির সংখ্যা ২২৯টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ৬৫৫ কোটি ৪৩ লাখ। অপর কোম্পানি নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (নওপাজোকো) আপত্তির সংখ্যা ২টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ২ হাজার ৯২১ কোটি ৫১ লাখ। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) আপত্তির সংখ্যা ২১টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ১ হাজার ১৬৩ কোটি ৪২ লাখ। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো ও প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে, জ্বালানি হিসেবে কয়লা তুলনামূলকভাবে স্বল্প মূল্যের হওয়ায় সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ সরকারের মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১১ সালে গঠিত কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অডিট আপত্তির সংখ্যা ৩টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ১৪৮ কোটি। এছাড়া নেসকো নামে পরিচিত সরকারি মালিকানাধীন অপর বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির আপত্তির সংখ্যা ৩৮৯টি, যার বিপরীতে টাকার পরিমাণ ২৭০ কোটি ৯৩ লাখ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিনের এই অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি না করায় মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি হিসেবে দেখছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। অল্প সময়ের মধ্যে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই টাকা আদায় করতে হবে। দীর্ঘদিন সরকারি টাকা অনাদায় থাকবে, এটা হতে দেব না। অডিট আপত্তি শিগগিরই নিষ্পত্তি করার কথা এরই মধ্যে বলা হয়েছে।’

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ