ঢাকা, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
করোনাভাইরাস

মজুদ টিকা শেষ হতে ‘দুই সপ্তাহ’

পরের চালান কবে আসবে তা অনিশ্চিত
প্রকাশনার সময়: ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৩৭ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৪৭
সংগৃহীত

সরকারের কেনা ভারতীয় টিকার পরের চালান কবে আসবে তা অনিশ্চিত। নতুন উৎস থেকে টিকা না এলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে টিকাদান কার্যক্রম। এদিকে অক্সফোর্ড -অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা যে হারে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তাতে মজুদ টিকা দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এখন যে টিকা আছে তাতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেওয়া যাবে। এরই মধ্যে নতুন টিকা আনার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ৭ ফেব্রুয়ারি গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর এ পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ৭৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬১ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৬ জন প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরুর পর থেকে ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৫ জন টিকা নিয়েছেন। সে হিসাবে এখন মজুদ আছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৯ ডোজ।

দ্বিতীয় ডোজ শুরুর পর থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময় ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫৮ ডোজ টিকার প্রয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৫ জন এবং ২ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ জন নিয়েছেন প্রথম ডোজ। এর মধ্যে তিন দিন টিকাদান বন্ধ ছিল। ১২ কার্যদিবসে দৈনিক গড়ে টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৯৫ জন। সে হিসেবে মজুদ টিকা সাড়ে ১৩ দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারে।

সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গত বছরের নভেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। ওই টিকা সরবরাহের দায়িত্বে আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ দেশে এলেও বিপুল চাহিদা আর বিশ্বজুড়ে টিকার সঙ্কটের মধ্যে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়। এরপর আর কেনা টিকা আর আসেনি। এর বাইরে ভারত সরকার দুই দফায় উপহার হিসেবে দিয়েছে মোট ৩২ লাখ ডোজ, সেগুলোও সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, যার মধ্যে ১২ লাখ ডোজ এসেছে গত ২৬ শে মার্চ।

টিকা না এলে কি হবে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ বলেন, “আপনার কাছে যদি কিছু না থাকে তখন কি করবেন। তখন তো স্থগিত রাখতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে কোনো গ্যাপ না হয়। টিকা যেন এর আগেই চলে আসে।”

সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৩ কোটি ডোজ টিকার মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ এসেছে। ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা কবে আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ।

টিকার পরবর্তী চালান কবে আসবে তা জানতে বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর বেক্সিমকোর ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেন, “আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে পরবর্তী আপডেট পেলে আপনাদের জানাব।”

টিকা পাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারত থেকে টিকা আনতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে বেক্সিমকো। ১৮ এপ্রিল ভারত সরকারকে অনুরোধ করতে বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষে সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ চিঠির বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “আমরা যতটুকু করার চিঠিপত্র যা দেওয়ার সেটাতো… একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন এসেছিলেন তখন তাকে বলেছেন।

“আমাদের ফরেইন মিনিস্ট্রি লেভেলে বলাবলি হয়। আর কীভাবে হেল্প করব? এটাতো বেক্সিমকোরও দায়িত্ব, তারা লোকাল এজেন্ট। সুতরাং দায়িত্ব তো তাদের।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক দেশের আগেই টিকাদান শুরু করেছে। কিন্তু মাঝখানে এসে টিকা আসা বন্ধ হয়ে যাবে যাবে সেটা ধারণায় ছিল না। “এটা আনফরচুনেট। ভারতের নিজেদের যেহেতু ক্রাইসিস শুরু হয়েছে। এ কারণে তার এক্সপোর্ট স্টপ করে রেখেছে।”

বাংলাদেশ ভারতের বিকল্প হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে বলে তিনি জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকাদান কার্যক্রমের অনিশ্চতার বিষয়ে জাহিদ মালেক, “এ কারণে এখন আমরা সেকেন্ড ডোজের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।”

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ