মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

ঈদের পর শিল্প-কারখানা খোলা রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি

প্রকাশনার সময়: ১৫ জুলাই ২০২১, ২০:৩৬

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই সর্বোচ্চ গতিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আগামি ২১ জুলাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিধিনিষেধ শিথিল করে আজ থেকে শুরু হয়েছে গণপরিহন চলাচল। তবে ঘোষণা রয়েছে ঈদের পর ফের কঠোর লকডাউনে থাকবে দেশ।

এদিকে কোরবানির ঈদের পর কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও শিল্প-কারখানা ও গার্মেন্টস খোলা রাখার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতারা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে তার কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেন। পরে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘সরকার নতুন করে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আমরা চিঠি দিয়েছি। বিধিনিষেধের মধ্যে যে সময়টুকু কারখানা বন্ধ থাকবে, তার মধ্যে রফতানিমুখী শিল্পগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে বিষয়গুলো জানিয়েছি। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সে অনুযায়ী বিবেচনা করতে বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আবেদন শিল্প-কারখানা যেন খোলা থাকে। করোনার প্রথম ধাক্কায় শিল্প-কারখানাগুলোর অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছিল। সেগুলো আবার ফিরে এসেছে। এগুলো বাস্তবায়ন করছি। উইন্টার ও ফল সিজনের শিপমেন্টগুলো ১৫ আগস্টের মধ্যে শিপমেন্ট করতে হয়। এই শিপমেন্টগুলো যদি দিতে না পারি, তাহলে ফ্যাক্টরিগুলো দেউলিয়া অবস্থার মধ্যে চলে যাবে। ক্লোজিং ভীষণ সমস্যায় পড়ে যাবে। এজন্য জীবন-জীবিকার সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি। শনিবার সভা আছে, সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে সই করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিজিএপিএমইএ সভাপতি আব্দুল কাদের খান ও বিটিটিএলএমইএ সভাপতি শাহাদাত হোসেন সোহেল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব অতিমারি কোভিড মোকাবিলায় আপনার উদ্যোগ দেশ ও বিদেশে নিঃসন্দেহে সর্বজন প্রশংসিত। স্মরণকালের সর্বোচ্চ সংকটেও সীমিত সামর্থ্য ও সম্পদে আপনার ঘোষিত প্রণোদন প্যাকেজগুলো এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সংকট মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে চলমান রাখার সাহস যুগিয়েছে। গত বছরের ২৬ মার্চ-২৫ এপ্রিল এক মাস শিল্পকারখানা বন্ধ থাকার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ তিন মাসে রফতানিতে ধস নেমেছিল। ওই সময় আপনার ঘোষিত প্রথমে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, পরবর্তিতে দুই বারে আরও সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকাসহ মোট সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার শ্রমিকদের বেতনভাতা বাবদ ঋণ প্রণোদনা এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ সুবিধা দেওয়ায় দেশের রফতানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো টিকে থাকার একটি অবলম্বন খুঁজে পেয়েছিল। একই সঙ্গে শিল্প কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার আপনার সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সামগ্রিক রফতানি খাত ২০২০-২১ অর্থবছরে আবার কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য আমরা দেশের শিল্প কারখানার উদ্যোক্তারা আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

চিঠিতে তার আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন যে, রফতানি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে বস্ত্রখাত (নিটওয়্যার, ওভেন, টেরিটাওয়েল, হোম টেক্সটাইল) যাদের সম্মিলিত রফতানি আয় ৩২ দশমিক ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। মহামারি করোনায় বিগত ১৫ মাস বাজার ধরে রাখা এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা চালিয়ে রাখার স্বার্থে আমরা লোকসান দিয়েও কারখানা চালিয়ে রেখেছি। এ সময়ে অনেকেই এ ধাক্কা বা অবস্থা সামাল দিতে না পেরে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার। ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের সব বাজারই খুলতে শুরু করেছে। এখনই প্রত্যেকের হাতে রয়েছে পর্যাপ্ত কার্যাদেশ, রয়েছে জাহাজীকরণের প্রচণ্ড চাপ। বিলম্ব হলেই এয়ার শিপমেন্ট ধরিয়ে দিতে ধরিয়ে দিচ্ছে তারা। এমনিতেই সূতার দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং কন্টেইনার ও জাহাজ সংকটে রফতানি ক্ষতিগ্রস্থ। আবার এই সময়ে ঈদের ছুটিসহ প্রায় ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে এক অনিশ্চয়তার মাঝে লেইট সামার, ক্রিসমাস ও বড়দিনসহ আগামী শীতের কার্যাদেশগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে। কারণ এক মাসের রফতানি শিডিউল গড়বড় হলেই পরবর্তি ৬ মাসের রফতানি শিডিউলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমতাবস্থায় এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হবে দেশের রফতানিখাত, দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক উদ্যোক্তা।

চিঠিতে তারা আরও বলেন, ‘গত রোজার ঈদে কাজের চাপ কম থাকায় ছুটিও কিছুটা শিথিল ছিল। এখন কাজের প্রচুর চাপ থাকায় ঈদে লম্বা ছুটির সুযোগ নেই। কিন্তু ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকার ঘোষিত ১৪ দিন ও ঈদেরছুটিসহ মোট ১৯/২০ দিনের বন্ধ পেলে কোনো অবস্থাতেই শ্রমিকদের কর্মস্থলে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। শ্রমিকরা ছুটে যাবে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। যেগুলো করোনার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত। ফলে এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিক জনগোষ্ঠী ওইসব অঞ্চল থেকে কর্মস্থলে ফিরে আসলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ২০ দিন বন্ধের পর কারখানা খোলার সঙ্গে সঙ্গে জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের বিষয়টিও সামনে চলে আসবে। এমতাবস্থায় আমরা মনে করছি আসন্ন ঈদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করে দেশের রফতানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো যত দ্রুত সম্ভব ঈদের পরে খুলে দিলে দেশের রফতানি খাত বহুমূখী বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাবে।’

উল্লেখ্য, পবিত্র ঈদ উপলক্ষ্যে বুধবার (১৪ জুলাই) থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনে আগামী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সেখানে সকল পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন বন্ধের পাশাপাশি শিল্প কারখানা বন্ধের কথাও বলা হয়। রফতানিমুখী এই শিল্প সচল রাখতে ওই সময়ে তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলো খোলা রাখার দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ