ঢাকা, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত কমতে পারে

প্রকাশনার সময়: ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৩৬
সংগৃহীত

টানা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে গতকাল বুধবার রাতে কিছু অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির পর দেশের তাপমাত্রা বেশ কমেছে। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) এ তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে।

আগামী তিন দিন, অর্থাৎ শনিবার পর্যন্ত, গরম তুলনামূলকভাবে কম থাকারও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শনিবারের পর তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে। এদিকে আজ বৃহস্পতিবারও দেশের কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। দু-এক জায়গায় শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।’

গত রাতে সারা দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ঝড়, দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হয়। তখনই দেশে তাপমাত্রা কমে যায়। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, রাতে ঢাকায় বৃষ্টির চেয়ে বরং বাতাস বেশি ছিল, যা ঘণ্টায় ৮৩ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায়।

গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় টাঙ্গাইলে, ২৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া ঈশ্বরদীতে ছিল ২২ মিলিমিটার। এ ছাড়া বগুড়াসহ রাজশাহীর বেশ কিছু জায়গায়, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, সিলেট ও সৈয়দপুরে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।

গত কয়েক দিন যখন গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা, তখনই এই বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া একটু স্বস্তি দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম অনুভূত হয় রাজশাহীতে। টানা কয়েক দিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল সেখানকার তাপমাত্রা। যদিও গতকাল সেখানকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনা বিভাগের যশোরে, ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগটির কয়েকটি এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি বা তার বেশি। এ ছাড়া অন্য যেসব এলাকায় তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল, সেগুলো হচ্ছে ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বরিশালে ৩৬ দশমিক ৬, রাঙামাটিতে ৩৭ দশমিক ৫ ও শ্রীমঙ্গলে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মিরপুরের কাফরুল থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা। দূরত্ব সামান্য হলেও এই দুই এলাকার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য কমপক্ষে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এই গ্রীষ্মের দুপুরে কালীগঞ্জে যদি স্বাভাবিক গরম থাকে, তখন মিরপুরের মানুষ মাঝারি মাত্রার দাবদাহে অতিষ্ঠ। একই ধরনের পার্থক্য রয়েছে মতিঝিলের সঙ্গে সোনারগাঁয়ের আর গাবতলীর সঙ্গে সাভারের।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানকার পাহাড়তলীর সঙ্গে সীতাকুণ্ডের তাপমাত্রার পার্থক্য পাওয়া গেছে প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি দুটি এলাকার তাপমাত্রার এই পার্থক্য অবশ্য এক দিনে তৈরি হয়নি। ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের তাপমাত্রার ধরন বিশ্লেষণ করে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের প্রধান তিনটি বড় শহর—ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ‘উষ্ণ নগরদ্বীপ’ বা আরবান হিট আইল্যান্ড তৈরি হচ্ছে। এত দিন মনে করা হতো, শুধু ঢাকার কিছু কংক্রিটময় ও সবুজহীন এলাকায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ গবেষণায় দেশের অন্য বড় শহরগুলোতেও এ প্রবণতা দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার ছয়জন গবেষক মিলে গবেষণাটি করেছেন। গবেষক দলটি মনে করছে, অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামে উষ্ণ নগর অঞ্চল তৈরি হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে শহর দুটির পুরোটাই শিগগিরই এ ধরনের চরম আবহাওয়া এলাকায় পরিণত হবে।

‘উষ্ণ নগরদ্বীপ’ ঢাকা-চট্টগ্রাম

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটের গত ২০ বছরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে আমলে নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। মূলত ভূ-উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশের ৫টি শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সঙ্গে প্রান্তের গ্রামাঞ্চলের তাপমাত্রার পার্থক্য পরিমাপ করা হয়েছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, নগরায়ণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এরূপ বড় শহরগুলোতে এ ধরনের এলাকা দ্রুত বাড়ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ৭০ শতাংশ এলাকায় এ ধরনের উষ্ণ দ্বীপ তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রামে তা ৬০ শতাংশ।

‘বাংলাদেশের ৫টি প্রধান শহরের নগর উষ্ণ দ্বীপ: ধরন, কারণ ও প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি বিজ্ঞান সাময়িকী সাসটেইনেবল সিটি অ্যান্ড সোসাইটিতে চলতি মাসে বেরিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে ঢাকার দিনের তাপমাত্রার তীব্রতা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। চট্টগ্রাম ও খুলনায় বেড়েছে প্রায় আধা ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সিলেটে দশমিক ৩৭ ডিগ্রি। একসময় দেশের অন্যতম উষ্ণ এলাকা রাজশাহীতে বেড়েছে মাত্র দশমিক শূন্য ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এমন বাস্তবতায় আজ ২২ এপ্রিল পালিত হচ্ছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সারা বিশ্বে চেষ্টা করলে পৃথিবীর পুনরুদ্ধার সম্ভব’। ১৯৭২ সালে শুরু হওয়া এ দিবস আজ সারা বিশ্বেই ভার্চ্যুয়ালি পালিত হবে। সূত্র : অনলাইন

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ