ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই, মাস্ক পরায় অনীহা

প্রকাশনার সময়: ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১০:১৮

দেশে ফের করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পাশাপাশি চোখ রাঙাচ্ছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। সরকারের বিভিন্ন বিধিনিষেধের পরও সেই অর্থে সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি উপেক্ষিত। রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে যাত্রীদের। সঙ্গে চালক-সহকারী এবং বাসে ওঠা যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার নিয়েও রয়েছে অনীহা। আর মাস্ক পরাদের মধ্যে বেশিরভাগই থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখছেন। বাসে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজার, বাংলামটর, শাহবাগসহ কয়েকটি সড়কের বাসে ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। কারওরান বাজার সার্ক ফোয়ারা থেকে একটু সামনে শিকড় পরিবহনের চালকের সহকারী যাত্রী তোলার জন্য হাঁকডাক দিচ্ছেন। অথচ বাসে উঠে দেখা যায় প্রতিটি সিটে সাধারণ যাত্রী বসা। কয়েকজন দাঁড়িয়েও রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই মুখে মাস্ক পরা নেই। আর মাস্ক পরাদের মধ্যে বেশিরভাগই মুখ থেকে খুলে থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছে। মাস্ক না পরা অয়ন নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় মাস্ক পরে থাকতে সমস্যা হয় তার। সেজন্য মাঝে মধ্যে খুলে রাখে। একইস্থানে ট্রাস্ট পরিবহনে উঠে দেখা যায়, চালকের সহকারী মাস্ক না পরেই গেটে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছেন। জানতে চাইলে এ সহকারী বলেন, সারাদিন গাড়িতে থাকি। গরমের কারণে সবসময় মাস্ক পরা যায় না। তাছাড়া মাস্ক পরে কথা বলতে সমস্যা হয়।

বাংলামটর মোড়ে ফার্মগেটমুখী কয়েকটি বাসে উঠে দেখা যায় একই চিত্র। সেখানে বিআরটিসি বাসে উঠে দেখা যায়, গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠানো হয়েছে। অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। নূরউদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মহাখালী যাবেন। মাস্ক মুখে না পরে থুতনির ওপর কেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবসময় পরে থাকলে দম বন্ধ হয়ে যায়।

করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহন নিয়ন্ত্রণসহ ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেশবাসীকে এসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে বলা হয়, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

বিধিনিষেধগুলো হলো—বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। আর সব ধরনের যানবাহনের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে করোনার টিকা সনদ থাকতে হবে।

বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনে ভাড়া কত বাড়বে সিদ্ধান্ত আজ: করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, কাল বৃহস্পতিবার থেকে গণপরিবহন চলবে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে। অর্ধেক সিট খালি রাখায় বাসের ভাড়া কত বাড়বে— এ বিষয়ে আজ বুধবার বেলা আড়াইটায় বাস মালিকদের সঙ্গে পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সভায় সিদ্ধান্ত হবে।

আগেরবার বাস ভাড়া ৬০ শতাংশ বেড়েছিল অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার কারণে। মাস দুই আগে ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বাস ভাড়া বেড়েছে। এখন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার কারণে বাস ভাড়া বাড়লে তা যাত্রীদের জন্য ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’ হয়ে দাঁড়াবে।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশনা কীভাবে কার্যকর করা হবে— তা আজ মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক করা হবে। ভাড়া বাড়বে কি-না, বাড়লে কতটা বাড়বে—সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে। ভাড়া বৃদ্ধি বৈঠকের উদ্দেশ্য নয়। বিআরটিএ সবার আগে জনস্বার্থ দেখবে।’

২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস (কোভিড্ল-১৯) সংক্রমণ রোধে লকডাউনের প্রথম দফায় ৬৮ দিন বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ ছিল। সে বছরের ১ জুন থেকে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল শুরু হয়। মালিকদের প্রস্তাবে সেবার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। গত বছর দুই দফার ‘লকডাউনের’ পরও ভাড়া বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলেছিল বাস।

ডিজেলের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৮ নভেম্বর বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। ঢাকায় বাসের ভাড়া কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দুই টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কিলোমিটারে এক টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে এক টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। কিন্তু আসন বিন্যাসের কারণে ৪০ আসনের বাসে সেই ভাড়া পরছে দুই টাকা ৩৪ পয়সা।

আগেরবার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার শর্ত মানতে মালিকরা বাসভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল। পরে মন্ত্রণালয় ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছিল। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘ভাড়া কত বাড়াতে হবে- এমন কোনো প্রস্তাব মালিকরা দেবেন না। অর্ধেক সিট খালি রাখলে মালিকের লোকসান হবে। আবার যাত্রীদের স্বার্থও দেখতে হবে। লোকসান পোষাতে যতটা ভাড়া না বাড়ালেই নয়, ততটা বাড়ানোর দাবি করবেন মালিকরা।’

পরিবহন মালিক সূত্র জানায়, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে অন্তত ৫০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি চান তারা। তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত খোলা রেখে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। এতে শুধু ভাড়া বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাবে- যানবাহন সংকটের কারণে বাস যাত্রীবোঝাই হয়ে চলবে।’

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মাস দুই আগে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাসের ভাড়া ২১৫ টাকা থেকে ২৭০ টাকা হয়েছে। অর্ধেক আসন খালি রাখার কারণে মালিকদের দাবি মেনে ৫০ শতাংশ বাড়লেও ভাড়া হবে ৪০৫ টাকা। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে বাস ভাড়া দ্বিগুণ হবে। মাস দুই আগে মিরপুর-১০ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাসে ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন ২৬ টাকা হয়েছে। অর্ধেক বাড়লেও ভাড়া হবে ৩৯ টাকা। অর্থাৎ নগর পরিবহনে ভাড়া দুই মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। আগের বিধিনিষেধ চলাকালে অ্যাপভিত্তিক গাড়িতেও আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার নিদের্শনা দেয়া হয়েছিল। বন্ধ ছিল মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন। এবারো এমন সিদ্ধান্ত আসবে কিনা—এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেসব যানবাহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন সম্ভব নয়, সেগুলো তো চালানো যাবে না। তবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত বুধবারের বৈঠকেই হবে।’

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ