ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা রাজধানীতে বেড়েই চলছে। নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেড়ে চললেও এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা। বছরের পর বছর অগ্নিঝুঁকি নিয়েই চলছে রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল-ক্লিনিক, শপিং মল, ব্যাংক, আবাসিক হোটেল ও মিডিয়া সেন্টারের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। শটসার্কিট কিংবা অসাবধানতাবশত যেকোনো সময় অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা থাকলেও ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা নেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে। অগ্নিনির্বাপক-ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বারবার চিঠি ও নোটিশ পাঠানো হলেও কর্ণপাত করছেন না কেউ। মালিকপক্ষের অসচেতনতায় এসব ভবন যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর ৮০ শতাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে এসব অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থাহীন ভবন থেকেই। অগ্নিনির্বাপণে এসব প্রতিষ্ঠানে এতই করুণ অবস্থা যে, যেকোনো সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ড রোধে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয় প্রয়োজন। এই চার বিভাগ এক হয়ে কাজ করলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমে আসবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) (অ.দা.) দিনমনি শর্মা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কয়েক দফা রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এরমধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে একাধিকবার অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই তাদের অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা জোরদার করেনি। এ পর্যন্ত তাদের কয়েকবার নোটিশ ও স্মরণিকা দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানান তিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কখনোই সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশনের তথ্যে রয়েছে বিস্তর অমিল। এমনটাই মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদগণ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সংখ্যা জানাতে গিয়ে সরকারের এই সংস্থাগুলো আলাদা আলাদা পরিসংখ্যান জানাচ্ছে। আর তাই ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াও রয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, ঢাকায় ৭২ হাজার ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ২০০৪ সালে পুরান ঢাকায় ভবন ধসে ১৭ জনের মৃত্যুর পর অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের করা জরিপে রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পাঁচশ’র মতো ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে প্রথম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। পরে ২০১৬ সালে তালিকাটি হালনাগাদ করা হয়। তাদের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ৩২১টি। এরমধ্যে বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে নির্মিত ভবন রয়েছে ৫ হাজার। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৩২১টি ভবনের বেশিরভাগই রয়েছে পুরান ঢাকায়। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানা এলাকায় রয়েছে ১৪৬টি, কোতোয়ালিতে ১২৬টি ও লালবাগে ২৮টি। বাকি ২১টির মধ্যে মোহাম্মদপুরে ৬টি, ডেমরায় ৩টি, মিরপুরে ৭টি, রমনায় ১টি, তেজগাঁওয়ে ১টি, মতিঝিলে ২টি ও ধানমন্ডিতে ১টি।
আবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির ২০১৯ জানুয়ারির বৈঠকে ত্রুটিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবন দ্রুত অপসারণের উদ্যোগ নিতে সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশের আলোকে ৯০৬ ভবনকে ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাজউক। তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাড. শ ম রেজাউল করিম ২৫ জুন ২০১৯ সালে পরিবেশ-বান্ধব আবাসিক এলাকা তৈরি করতে রাজধানী ঢাকার অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পর্যায়ক্রমে ভেঙে ফেলা হবে বলে জানিয়েছিলেন। তখন ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে এক হাজার ৮১৮টি ভবন তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। শিগগিরই রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ফায়ার সার্ভিস রাজধানীর প্রায় চার লাখ ভবনের ওপর জরিপ করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পরিসংখ্যান ও অপসারণ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটিতে সাড়ে ৩ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ ভবন রয়েছে। আরো ১ হাজার ভবন তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটা প্রকল্প নিয়েছি। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে তা একটা মডেল হবে। তবে আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। আমরা দ্রুতই কাজ শুরু করতে চাই। আমাদের প্রথম কাজ হবে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী, ভবনের পাশের রাস্তাগুলো বড় করা, সেটব্যাক ভেঙে ফেলা। ঐতিহ্যবাহী ভবন রক্ষা করা, যে ভবন রাখা যাবে না, তা ভেঙে দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে আমরা একটা প্রকল্প দাঁড় করিয়েছি। আমাদের ড্যাপের পিডিকে দিয়ে কাজ করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কাজটি করতে পারব।’
নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘রাজউক, দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত, ফায়ার সার্ভিস এবং সিটি করপোরেশন যেভাবে সারা ঢাকা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে বা করতে নেমেছে, তা আসলে কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না। এতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। কাজটি করা দরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। যেমন— মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, অফিস, বাণিজ্যিক কেন্দ্রর মতো ভবন, যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেগুলো নিয়ে আগে কাজ করা দরকার। সেগুলোর ফায়ার সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে আগে ভাবা উচিত। আগে জরুরি ভিত্তিতে জীবন রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। রাজউক যেভাবে কাজ শুরু করেছে তাতে আমার মনে হয় তারা বিষয়টি অন্যদিকে নিয়ে যেতে চায়।’ তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কাজ হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আইনের ব্যাপ্তি ঘটানো। এ ক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তা না হলে যেকোনো সময় অগ্নিকাণ্ডসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের আগে যে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ছিল, তাতে বহুতল ভবনের ব্যবহার-বিধির পাশাপাশি এসব ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ও নিরোধকের ব্যবহারে কিছু ছিল না। একইসঙ্গে ভবনের বিভিন্ন পর্যায়ের নকশার পাশাপাশি ইলেকট্রিফিকেশনের কোনো নকশার বিষয়টিও ছিল না। এতে করে একটি ভবন কোনোপ্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে। একইসঙ্গে ওই ভবনের ব্যবহারও হচ্ছে ইচ্ছেমতো।
পুরোনো ঢাকার সরু অলিগলির দুই পাশে গেলে দেখা যাবে, এখনো গায়ে গাঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভবন। সর্বোচ্চ তিন তলা গাঁথুনি যে ভবনটির, সেখানে নির্দ্বিধায় তোলা হচ্ছে ৫-৬ তলা। জগন্নাথ পাড়া এলাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ বর্গফুট জায়গায় একটি ৫ তলা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এর বিভিন্ন তলায় বসবাস করছেন এক পরিবারের অন্তত ১৫ জন সদস্য।
দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার যৌথ জরিপে জানা গেছে, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে। এক লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আক্তার সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সাধারণত প্রতি ১০০ বছর পর বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে। সবশেষ ১৮২২ ও ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। সে হিসাবে আরেকটি বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে রাজধানীর তিন হাজার ৭৮৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এক হাজার ৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, দুই হাজার ৫৮৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং মাত্র ১২৯টি সন্তোষজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে এক মাসের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানই তাদের অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা জোরদার করেনি। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস গত ২০১৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বর এই দুই মাস আবারো তিন হাজার ৭৩৪টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে। যার ফল আবারো এক হাজার ৬৬ প্রতিষ্ঠান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, দুই হাজার ৫৮৩টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং মাত্র ৮৫টি সন্তোষজনক। এরপর আবারো চিঠি ও চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হলেও সামান্য কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা জোরদার করেনি। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতেই ৮০ শতাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা অনুযায়ী, ২৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বাঙলা কলেজ, হাবিবুল্লা বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাপাতাল, ল্যাবএইড ও ইবনে সিনা। ৬২২টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ শপিং মলের মধ্যে রয়েছে— বসুন্ধরা শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান টাওয়ার, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, পলওয়েল সুপার মার্কেট, মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স, শ্যামলী গার্ডেন ও লালমাটিয়ার আড়ং মার্কেট। ২১টি আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে— রেডিসন ব্লু, লি মেরিডিয়ান, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, টি ট্রি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, লা ভিঞ্জি হোটেল ও রয়েল গ্রান্ড হোটেল। ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, এনসিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের হেড অফিস অন্যতম। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই অগ্নিনির্বাপক-ব্যবস্থা রাখে না। পরিদর্শনের পর ওইসব প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিঠি দিলেও কর্ণপাত করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধও করে দিতে পারি না। এর প্রধান কারণ কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। এ সমস্যা সমাধানে আমরা সিটি করপোরেশন ও রাজউককে নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করছি। এরই মধ্যে অনেকে সাড়াও দিচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, প্রচলিত আইন কার্যকর করতে হলে ফায়ার সার্ভিসকে অন্য কোনো সংস্থার সহায়তা নিতে হয়। মাঝে একবার ফায়ার সার্ভিস আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট চালানোর পরিকল্পনা নিলেও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসকে ক্ষমতা দেয়া জরুরি। হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর সুউচ্চ ভবনগুলোর ৮১ ভাগে ইকসটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র), ধোয়া নির্ণয়ক রয়েছে ১৭ দশমিক ১৪ ভাগে, তাপ নির্ণয়ক রয়েছে ৮ দশমিক ৫৭ ভাগে, রশ্মি নির্ণয়ক রয়েছে দশমিক ৯৫ ভাগে এবং ইন্টারকম (অভ্যন্তরীণ নিজস্ব যোগাযোগ) রয়েছে ৬০ ভাগ ভবনে। ভবনগুলোর মধ্যে ৭৯ ভাগে ইলেকট্রিসিটি সাবস্টেশন থাকলেও নিয়ম মেনে মাত্র ১৮ ভাগ ভবনে ইলেকট্রিসিটি সাব স্টেশন করা হয়েছে। জরুরি বহির্নিগমন-ব্যবস্থা রয়েছে পাঁচ দশমিক ৭১ ভাগ ভবনে আর আগুন লাগলে দ্রুত বের করে আনাতে সক্ষম দুই দশমিক ৮৬ ভাগ ভবনে ফায়ার লিফট রয়েছে। নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক রয়েছে ১১ দশমিক ৪৩ ভাগ ভবনে, জরুরি হেলিকপ্টার অবতরণ ব্যবস্থা রয়েছে ১৫ দশমিক ২৪ ভাগ ভবনে আর ৫০ হাজার গ্যালনের নিচে পানির ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ভবনের হার ৩১ দশমিক ৪৩ ভাগ। রাজধানীর মতিঝিল এবং সেগুনবাগিচা এলাকায় বহুতল ভবনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ