হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বিয়ে নিয়ে কয়েকদিন থেকেই আলোচনায়। গ্রেপ্তারের পর প্রথম রাতেই পুলিশকে জানিয়েছেন তিন বিয়ের কথা; এর মধ্যে শুধু প্রথম বিয়ের কাবিন আছে, পরের দুটির নেই।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার একটি রিসোর্টে ৩ এপ্রিল এক নারীসহ আটকের পর ভাংচুর ও সহিংসতার ঘটনার পাশাপাশি একাধিক বিয়ের ঘটনায় আলোচনায় আসেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় এই নেতা।
গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার হারুন অর রশিদ রোববার রাতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি জানান, মামুনুল তিনটি বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন। “এই তিনটি বিয়ের মধ্যে একটির কাবিন করেছেন। বাকি দুইটির কাবিননামা করেননি বলে মামুনুল বলেছেন।” আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামুনুল তাদেরকে বলেছেন, সোনারগাঁওয়ে যে নারীসহ (জান্নাত আরা ঝর্ণা) আটক হয়েছিলেন, তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তার তৃতীয় স্ত্রীও আছে। তদন্তে সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তিন স্ত্রীর মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি তার ছোট স্ত্রী। মেজ স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা এবং বড় বা প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা। মেজ ও ছোট স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের কোনো কাবিননামা হয়নি বলে মামুনুল পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন। সূত্র : বিডি নিউজ
কাবিননামা হলো একটি আইনি দলিল। বাংলাদেশ জাতীয় বাতায়নের ‘বিবাহ রেজিস্টার’ বিষয়ক অংশে বলা হয়েছে, “মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বিয়ে প্রমাণ করা কঠিন। রেজিস্ট্রেশন করা না থাকলে মেয়েরা প্রতারিত হতে পারে। সকল বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক। দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামা একটি আইনগত দলিল। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
শাস্তির বিষয়ে বলা আছে, “মুসলিম আইনে রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রেজিস্ট্রেশন না করলে ২ বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে; তবে বিয়েটি বাতিল হবে না।”
রোববার দুপুরে মামুনুলকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর রাতে তদন্ত কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে রোববার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁওয়ের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।তখন মামুনুল কর্মকর্তাদের বলেছেন, ছোট স্ত্রীর সঙ্গে তিনি বেশি সময় কাটাতেন। তবে তাকে কবে বিয়ে করেছেন সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শাহজাহান নামে গাজীপুরের এক ব্যক্তি গত ১১ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থানায় এক সাধারণ ডায়েরিতে বলেছেন, আগের দিন ১০ এপ্রিল মামুনুল তাকে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে বলেন তার বোন লিপিকে তিনি বিয়ে করেছেন। এ সময় তাকে একটি চুক্তিনামা দেখান। এর আগে ৭ এপ্রিল বোনের সঙ্গে সর্বশেষ তার কথা হয়েছিল বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।জিডিতে শাহজাহান বলেছেন, “এসময় লিপি তাকে বলেছিল মোহাম্মদপুরে দিলরুবা আপার বাসায় সে আছে।” মামুনুলকে গ্রেপ্তারের পর উপ কমিশনার হারুন বলেছিলেন, ওই জিডির বিষয়েও মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে রিসোর্টে মামুনুলের সঙ্গে থাকা ঝর্ণা এবং তৃতীয় স্ত্রী লিপি নজরদারির মধ্যে আছেন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ওই সূত্র বলছে, মামুনুলের প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বার বাসাও মোহাম্মদপুরে। তবে রিসোর্টকাণ্ডের পর সন্তানদের নিয়ে তিনি বাসা ছেড়েছেন। কোথায় গেছেন পুলিশ এখনও তা জানতে পারেনি।
আগের দিন গ্রেপ্তারের পর সোমবার আদালতের মাধ্যমে মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদে সাতদিনের হেফাজত পেয়েছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন জানিয়েছিলেন, মোহাম্মদপুর থানায় ২০২০ সালের একটি নাশকতার মামলায় মামুনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এটিসহ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ