ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
সুগন্ধা ট্র্যাজেডি

২১ কবরে ২৩ জনের দাফন

প্রকাশনার সময়: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:৪১
সংগৃহীত ছবি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে ২৩ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহগুলো বেশিরভাগ পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চিনতে পারেননি স্বজনরা। তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

গতকাল শনিবার বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, দুপুর ১টার দিকে সদরের পোটকাখালী সরকারি গণকবরে তাদের দাফন করা হয়। এর আগে ওই নৌ দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মৃতদের মধ্যে যে ৩৭ জনের মরদেহ বরগুনায় পাঠানো হয়, তাদের মধ্যে ১৪ জনকে শনাক্ত করেছে পরিবার।

শুক্রবার রাতে ৩৭ মরদেহ পাঠানো হয় বরগুনার উদ্দেশে। এর মধ্যে বরিশালেই চারটি মরদেহ শনাক্ত করে পরিবার। পরে ৩৩টি মরদেহ আসে বরগুনায়। সেখান থেকে আরো ১০ মরদেহ শনাক্ত করে নেয় পরিবার। বাকি থাকে ২৩টি, যেগুলো গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়। বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জালাল উদ্দীনের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ৩৩টি মরদেহ বরগুনা সদর হাসপাতালে আনা হয়।

বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। লঞ্চের ভেতর থেকে ফায়ার সার্ভিস ৩০ জনের এবং নদী থেকে কোস্টগার্ড ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে বরিশাল মেডিকেলে এক শিশু ও ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে একজনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ৩৭ জনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। আগুন লাগার পর যাত্রীরা নেভানোর চেষ্টা করেন। অনেকে ছাদে চলে যান। কেউ কেউ নদীতে লাফ দেন। ওই ঘটনায় দগ্ধ হন শতাধিক। নিখোঁজ কতজন এখনো জানেন না কেউ।

আগুনের ঘটনায় মামলা : অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঝালকাঠি সদর থানার ওসি খলিলুর রহমান জানান, গতকাল সকালে পোনাবালিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন এ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি তদন্তে কমিটি গঠন করেছে, কমিটির সদস্যরা গতকাল সকালে অভিযান-১০ লঞ্চ পরিদর্শনে যান। লঞ্চটি এখন ঝালকাঠির দিয়াকুল এলাকায় সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থান করছে। ঝালকাঠি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ৫১ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জোহর আলী।

সাত সদস্যের মেডিকেল টিম : ঢাকা থেকে সাত সদস্যের একটি মেডিকেল টিম বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে এসে পৌঁছেছেন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, ওই সাত চিকিৎসক রাতেই বরিশালে এসে পৌঁছান এবং হাসপাতালে রোগীদের সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সাত সদস্যের টিমে যারা রয়েছেন— শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক (প্লাস্টিক সার্জারি) ডা. নূরুল আলম, ডা. মাসরুর উর রহমান, রেজিস্ট্রার ডা. মোরশেদ কামাল, ফেস বি রেসিডেন্ট ডা. মৃদুল কান্তি সরকার, ডা. শাওন বিন রহমান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ডা. আল মোনতাসির বিল্লাহ ও ডা. ইসতিয়াক সুলতান। মেডিকেল টিমের প্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. নূরুল আলম জানান, প্রয়োজন হলে জরুরি অপারেশন করা হবে। এ কারণে অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। শেবাচিমেই প্লাস্টিক সার্জারি সম্ভব। যাদের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়, তাদের ঢাকায় নেয়া হবে।

আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার— শেখ সেলিম : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ সেলিম জানিয়েছেন, নৌ দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা ও অন্য বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। গতকাল সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়া ও ঢাকায় অনুষ্ঠান নিয়ে সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

ঢাকায় ভর্তি সবার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যেসব দগ্ধ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে তাদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন। গতকাল সকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের টিম বরিশালে গেছে। যদি কোনো রোগীকে ঢাকায় আনার প্রয়োজন হয়, আমরা নিয়ে আসবো। না হলে তাদের সেখানেই চিকিৎসা দেয়া হবে। আমি বারবারই বলি, যতক্ষণ সচেতনতা না আসবে এবং মনিটরিং না করা হবে ততক্ষণ এ ধরনের দুর্ঘটনা কেউ ঠেকাতে পারবে না।

চিকিৎসাধীন রোগীদের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে সামন্ত লাল সেন বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে রাত ৩টায়। হাসপাতালে আনতে আরো কিছু সময় লেগেছে। এই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত ফ্লুইড পেয়েছে কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর ওপর পরবর্তী চিকিৎসা নির্ভর করে। আমি বলব সবাই ক্রিটিক্যাল। আমি কাউকেই শঙ্কামুক্ত বলব না।

কর্তৃপক্ষ জানায়, অগ্নিদগ্ধ ২১ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে ভর্তি নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে ৪ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা গেছেন।

ভর্তি ১৬ জন রোগীর মধ্যে একজনের কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১৫ জনের মধ্যে ২ জনকে বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ১২ জনকে পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। একজনকে পিএইচডিউতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

দেখে চেনার উপায় নেই ৩১ মরদেহ : এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনে পোড়া ৩১ মরদেহ শনাক্ত করতে তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া এদের শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

দুই সন্তান হারিয়ে হারিয়ে স্তব্ধ বাবা ও পরিবারের সদস্যরা। প্রিয় সন্তানকে আর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করা হবে না। ছেলে আবদুল্লাহ আর মেয়ে আছিয়ার মুখে আর বাবা ডাক শুনবেন না মোহাম্মদ রাসেল। আগুনে দুই সন্তান, স্ত্রী আর শাশুড়িকে হারিয়েছেন তিনি। দুই সন্তান আর স্ত্রীর সন্ধান এখনো মেলেনি। তাই আহাজারিরও অন্ত নেই তার। স্ত্রীর মরদেহটি পেলেও প্রিয় মেয়ে ও নাতির খোঁজ এখনো মেলেনি।

ট্রাকে থাকা মানুষগুলো ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ফেরা হলো না স্বজনের কাছে। জায়গা হলো হাসপাতালের মর্গে। স্বজনরা বলছেন, প্রিয় মানুষের দেহটি ফিরে পেতে চান তারা। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় ৩৭টি মরদেহ পৌঁছায় বরগুনা হাসপাতালে। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে ছয়-সাতজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। বাকিদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করানো হবে।

স্ত্রীর ধাক্কায় নদীতে পড়ে প্রাণে বেঁচে গেলেন অন্ধ স্বামী : আমি তো অন্ধ, চোখে দেখি না। সেই রাতে যদি আমার স্ত্রী আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে না ফেলে দিত তাহলে আর বেঁচে ফেরা হতো না। কথাগুলো বলছিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ মাহমুদুর রহমান মিরাজ। বরগুনা সদর উপজেলার ৯নং বালিয়াতলী ইউনিয়নে বাড়ি তার। পাঁচজনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মা, সন্তান, স্ত্রী আর নিজে বেঁচে ফিরতে পেরেছেন। ফেরেননি বাবাসহ ৫১ বছর বয়সী ইদ্রিস খান।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আব্বা অসুস্থ ছিলেন। তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়েছিলাম ঢাকায়। বৃহস্পতিবার ঢাকার সদরঘাট থেকে অভিযান-১০ লঞ্চে উঠে নিচতলার ডেকে আমরা পাঁচজনে বিছানা বিছাই। লঞ্চ ছাড়ার পর আমাদের গ্রামেরই আরেক পরিচিত এসে আব্বাকে দোতলায় নিয়ে যান। তিনি বলেন, আমি তো একা, আসেন খোশগল্প করতে করতে রাত পার করে দিই। মাঝরাতে হঠাৎ চারদিকে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু হয়। তখন আমি, মা, আমার স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে লঞ্চের সামনে চলে আসি। এই সময়ে আমার হাত ফসকে স্ত্রী ও কন্যা একবার হারিয়ে গিয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে তারা আমাকে খুঁজে পায়।

এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যুবক বলেন, আমি বারবার স্ত্রী ও মাকে বলছিলাম আব্বার সন্ধান নিতে। লোকজনের মধ্যে চিৎকার করে ডেকেছিও। কিন্তু আগুনে হয়তো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, নয়তো ভিড় ঠেলে আসতে পারেনি।

মাহমুদুর রহমান বলেন, সবাই তখন চিৎকার আর কান্নাকাটি করছিল। আমরা চারজন লঞ্চের সামনে এক কিনারে ছিলাম। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তখন আমার স্ত্রী আমার মাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেন। মা নদীতে পড়ে পায়ে মাটি পান। তিনি চিৎকার করে আমাদেরও ঝাঁপ দিতে বলেন। মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে আমিও ঝাঁপ দিতে চাইছিলাম। কিন্তু ঝাঁপ দিয়ে লঞ্চের মধ্যে মানুষের গায়ে পড়ছিলাম। তখন আমার স্ত্রী আমাকেও লঞ্চের কিনারে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং মেয়েকে নিয়ে নিজেও ঝাঁপ দেন। এরপর আমরা চারজনে সাঁতরে নদীর কিনারে উঠি। তিনি বলেন, এখন আসছি আব্বার লাশটা অন্তত নিয়ে যেতে।

উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে : ঝালকাঠিতে লঞ্চ ট্র্যাজেডির ঘটনায় গতকাল সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং কোস্টগার্ডের ডুবুরিরা নিখোঁজের সন্ধানে সুগন্ধা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালান। দুর্ঘটনায় ঝালকাঠি থানায় গ্রাম পুলিশ বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেছে। এ ঘটনায় নৌ-মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত টিম পুড়ে যাওয়া লঞ্চ এবং বিভিন্ন ব্যাক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেছে।

গত শুক্রবারের পর উদ্ধার অভিযানে নিখোঁজের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। কোস্টগার্ড জানায়, নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী শাজাহান খান সকাল সাড়ে ১০টায় লঞ্চঘাট এসে ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় লঞ্চের শ্রমিকদের গাফিলতি থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝালকাঠি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকরা পৌর মিনি পার্কে এ পর্যন্ত নিখোঁজ ৫২ জনের তালিকা পেয়েছে। স্বজন হারানোরা ঝালকাঠি আসছেন। ঝালকাঠি হাসপাতালে দুই জন যাত্রীর চিকিৎসা চলছে। উদ্ধার হওয়া মৃতদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে এবং তাদের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলার বরইতলা গ্রামের মৃত হোসেন আলীর পুত্র আবদুর রাজ্জাক (৬২)। বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের সঞ্জীব হাওলাদের পুত্র স্বপ্নীল (১৪)। বরগুনা জেলার আমতলীর বশির আহমেদের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬০)। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ এলাকার কাদের হাওলাদারের পুত্র রিয়াজ হাওলাদার (৪০)।

গতকাল বেলা ১১টায় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল হাসান, সদস্য সচিব বিআইডব্লিউটির অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলাম, নৌ পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন, নৌ চলাচল বিভাগের মামুন অর রশিদ ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক তাইফুর আহমেদ এবং ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব); ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। লঞ্চটিতে আগুন লাগার কারণ, লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কী ধরনের অবহেলা ছিল এসব বিষয়ে তদন্ত করে সরকারের কাছে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। বিআইডব্লিউটিএ ৬ সদস্যের এবং জেলা প্রশাসক ৫ সদস্যের আরো ২টি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে এবং তারাও তদন্তের কাজ শুরু করেছেন।

বেঁচে যান একই পরিবারের ৩ জন : ঝালকাঠিতে নৌ দুর্ঘটনায় ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার (২০) ও তার চাচাতো বোন নার্সিং ডিপ্লোমা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তার (২১) ঝুঁকি নিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বড়দিনের ছুটিতে ফাতেমা, তার চাচাতো বোন ও বোনের ছেলেকে নিয়ে বরগুনার বামনায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে অভিযান-১০ নামক লঞ্চে আগুন লাগায় ভীতবিহ্বল হয়ে পড়েন তারা। এর মধ্যে দৃঢ় মনোভাব নিয়ে মুক্তা অপর দুই সঙ্গীকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। তার কোল থেকে শিশু রুমান পড়ে যায়। ঠিকই তাকে উদ্ধার করে পাড়ে তোলেন মুক্তা। এ সময় অনেকেই ঝাঁপ দিয়ে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

নদীতে ঝাঁপ দেয়ার আগে দুজনই দগ্ধ হয়েছেন। মুক্তা আক্তার বামনা উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের এবং ফাতেমা আক্তার ঢাকার কেরানীগঞ্জের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। রুমান (৮) তার বোনের সন্তান। মুক্তা আক্তার জানান, মনে হচ্ছে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ