ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারা নয় একা 

প্রকাশনার সময়: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:১৬ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২২, ১৭:১০

সারাদেশের থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়ে 'থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস মিটআপ-২০২১' অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওস্থ ফিল্ম আর্কাইব'র অডিটোরিয়াম রুমে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

জেনিফার বাংলাদেশ-এর সহায়তায় 'উই আর নট এ্যালন(ওয়ানা) বা আমরা নয় একা নামের একটি সংগঠন এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে শতাধিক থ্যালাসেমিয়া রোগী অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের অতিথি বায়ো মেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও আইইউবি'র সহযোগী অধ্যাপক ড মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ২ কোটি থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছে এবং প্রতিবছর ৭-১০ হাজার নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে দেড় থেকে দুই লক্ষ রোগী রয়েছে। এতো বৃহৎ সংখ্যক রোগী থাকার পরেও বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়ার জন্য কোন রিসার্চ ফান্ড নেই।

তিনি জানান, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগীর মাসে ৪ ব্যাগ ব্লাড লাগে। দেশের ৯৭ শতাংশ মা-বাবা তার সন্তান আক্রান্ত হওয়ার পূ্র্বে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে জানেন না। ৯৫ শতাংশ মা-বাবা বলেন, আগে জানলে বিয়ে করতাম না। ৯০ শতাংশ মা-বাবা এই বিষয়টি নিয়ে গিল্টি ফিল করেন।

ড. সরোয়ার আরো জানান, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়মিত ব্লাড লাগে। আমাদের দেশের ৭৭ শতাংশ মা-বাবার কাছে ব্লাড যোগাড় করা কষ্টকর। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ পরিবার বাংলাদেশের রক্তদান সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে কোন সহায়তা পায় না। ৩০ শতাংশ ব্লাড ভলেন্টিয়ারী সংগঠন থেকে ম্যানেজ করা হয় বাকি ৭০ শতাংশ ব্লাড মা-বাবারাই যোগাড় করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্লাড সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠিত নয়। ব্লাড সংগঠনগুলো এগিয়ে আসলে রক্তের সমস্যা সমাধান সম্ভব।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যপক ডা. সেলিম উজ জামান বলেন, দুইজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ে হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগ হবে। একজন রোগী এবং অন্যজন সুস্থ হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হবে না। তবে এক্ষেত্রে সন্তান 'বাহক' হবে। বাহক কোন সমস্যা নয়। আবার দুইজন বাহকের বিয়ে হলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হবে। তাই এক্ষেত্রে বিয়ের পূর্বে রক্তের পরীক্ষা করাটা অত্যন্ত জরুরি। বিয়ের সময় যদি আমরা এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দেই তাহলে আগামী ৫০-৬০ বছর পরে বাংলাদেশে আর কোন থ্যালাসেমিয়া রোগী থাকবে না।

অনুষ্ঠানের স্পন্সর জেনেফার বাংলাদেশ লি.-এর জেনারেল ম্যানেজার ডা. খন্দকার শামছুল আরেফিন বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সুস্থভাবে বাঁচতে পারে। রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো 'আয়রন চিলেটিং' যেটি কমাতে জেনোফার বাংলাদেশ কাজ করছে। থ্যলাসেমিয়া নতুন কোন ওষুধ আসলেই সেটি জেনেফার বাংলাদেশ যেকোনভাবেই হোক অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারে আনবে বলে জানান তিনি।

থ্যালসেমিয়া আক্রান্ত রোগী সেতা শতাব্দী বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে বাংলাদেশে প্রচার-প্রচারণা নেই। বিভিন্ন দেশে অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় তবে বাংলাদেশে দেয়া হয় না। ভারতে সকল সদর হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া ইউনিট থাকলেও বাংলাদেশে নেই।

আর এক রোগী ফারহিন ইসলাম বলেন, অনেক পিতা-মাতা ভাবেন, ওতো কিছুদিন পর মারাই যাবে। পড়াশোনা করিয়ে কি করব। এটা ভেবে অনেকে তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করান না। এটা কখনো করবেন না আপনারা। আমরাও মানুষ, আমরাও পারি। আমাদের সুযোগ দেয়া হয় না, সুযোগ দিলে আমরাও পারি। নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেছি।

উই আর নট এ্যালন(ওয়ানা) সংগঠনটির আহ্বায়ক কামরুন নাহার মুকুল বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়ে তাদের দুঃসহ যাপিত জীবনের জরাগ্রস্থ অসহায় সময়গুলোকে একটু আনন্দময় ও সহনীয় করতে এবং তাদেরকে সচেতনায় সচল রাখতেই আমাদের এই আয়োজন। এই আয়োজনের বিষয়ে জিগ্যেস করলে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাতটি।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ_

১. পেশেন্টদের নিয়ে মিলন মেলা

২. আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে নিজেদের দুঃখ কষ্ট, জীবন যাত্রায় সুবিধা-অসুবিধা, রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

৩. সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সকলকে জাগ্রত করা।

৪. থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা ব্যবস্থা শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রীকতা থেকে বেরিয়ে জেলা ভিত্তিক ব্যবস্থাকে প্রণয়নে সরকারকে জানানো।

৫. থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ওষুধ ও চিকিৎসাকে সহজলভ্য করা।

৬. সারা বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মাঝে একটা নেটওয়ার্ক তৈরী করে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধা ভাগাভাগি করা।

৭. বিয়ের পূর্বে ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি।

আমন্ত্রিত অতিথি এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়ে কেক কাটা হয়। দুপুর ২ টায় এটিএন নিউজ'র আয়োজনে মুন্নি শাহার উপস্থাপনার কানেকটিং বাংলাদেশ প্রোগ্রামটির রেকর্ডিং হয়। বিকেলে রোগীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এরপর পুরস্কার বিতরণী করা হয়।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ