কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ’বর্তমান সরকার কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও গবেষণা ফলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু দেশ স্থিতিশীল না হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে না। খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবো না।’
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কনফারেন্স রুমে ‘প্রথম লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণুু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন’ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানীরা। ফলে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধান গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। দেশের ২ মিলিয়ন হেক্টর জমি লবণাক্ত, যেখানে বছরে ১টি ফসল হয়। খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে ও ভবিষ্যতে খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমরা লবনাক্ত, হাওরসহ প্রতিকূল এলাকায় বছরে ২-৩টি ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। পূর্ণাঙ্গ জিনোম উন্মোচনের ফলে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ সহজতর হবে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, যতোই হুমকি দেয়া হোক না কেন, দেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। বর্তমান সরকারের অধিনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বিদেশীদের হুমকিতে কোনো কাজ হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, ব্রি’র মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবির উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে কৃষিমন্ত্রী বিনা উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সমূহের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী পরে ‘দেশে প্রথমবার লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণুু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় যোগদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, বিনা ও বাকৃবির যৌথ এ গবেষণায় বিভিন্ন মাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মিউট্যান্ট সৃষ্টি করে তা থেকে নানামুখী পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এম/৬ জেনারেশনে ৩ টি উন্নত মিউট্যান্ট শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত মিউট্যান্টগুলো প্যারেন্ট অপেক্ষা উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং ৮ ডিএস/এম মাত্রার লবণাক্ততা ও ১৫ দিন জলমগ্নতা সহিষ্ণু। এ গবেষণালব্ধ তত্ত্ব-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এর বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম লবণ ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের জীবন রহস্য উন্মোচন করেছে যার মাধ্যমে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধান গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে।
বিনা প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই আরোপিত মিউটেশনের মাধ্যমে ফসলের নানা জাত উদ্ভাবন করেছে। এসমস্ত গবেষণায় আরোপিত মিউটেশনের প্রভাবে ফসলের ফেনোটাইপের কাঙ্খিত পরিবর্তন দেখে উন্নত জাত সনাক্ত করা হতো কিন্তু জিনোমের কোথায় ডিএনএ বিন্যাসের পরিবর্তনের জন্য এমন কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হলো তার ব্যাখা প্রদান করা সম্ভব হতো না। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে এই গবেষণায় প্যারেন্ট ও নির্বাচিত তিনটি মিউট্যান্ট ধানের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন হয় যা বাংলাদেশে প্রথম।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ