ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে গত দু’দিন ধরে ঢাকাসহ সারাদেশে টানা বৃষ্টিতে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টিতে রাজধানীতে অফিসগামী, বিভিন্ন স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে বেশি।
সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে রাজধানীতে গণপরিবহনেরও সংকট দেখা দেয়। অন্যান্য দিনের তুলনায় সোমবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম লক্ষ্য করা গেছে। এতে গাড়ি না পেয়ে ভোগান্তি বেড়েছে নগরবাসীর।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, শাহবাগ, মালিবাগ, মগবাজার, মহাখালী এলাকায় সকালের দিকে সড়কে সীমিত সংখ্যক যানবাহন দেখা গেছে। বেলা বাড়ার পর কিছু যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও অনেকেই চড়তে পারেন নি হুড়োহুড়ির কারণে।
এছাড়া টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাসাবো, মুগদা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি গলি ও সড়কে বৃষ্টির পানি জমেছে। এর ফলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও কর্মস্থলে যেতে শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষদের নর্দমার ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে যেতে হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, একটু বৃষ্টিতেই ড্রেনের ময়লা পানি রাস্তায় জমে যায়। ফলে ময়লা পানিতে হেঁটে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হচ্ছে।
ঢাকার আনন্দবাজার, তেঁজগাও, আরামবাগ, মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় দুপুরের পর থেকে পথে নামা মানুষের ভোগান্তি তীব্রতর হয়। সড়কে বাস না পেয়ে অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটেছেন। অনেকে আবার সিএনজি অটোরিকশা রিকশায় চড়েছেন কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায়।
পথের যাত্রীদের অভিযোগ, বৃষ্টিতে সিএনজি অটোরিকশা মিটারে যেতে রাজি হচ্ছে না। কয়েকগুণ বেশি ভাড়া মিটিয়েই যাত্রী তুলছে সিএনজি চালকরা। রিকশা চালকরাও ৪-৫ মিনিটের দুরত্বে যেতে ভাড়া হেঁকেছেন ৫০-৭০ টাকা।
সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ধীরে ধীরে শক্তি হারাতে পারে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। দেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বহাল রাখা হয়েছে।
রাজধানীতে অনেকেই মাঝারি ধরনের বৃষ্টির কারণে জরুরি কারণ ছাড়া বাসা থেকে তেমন বের হয়নি। অনেকেই জাওয়াদের প্রভাবে ভারী বর্ষণের খবরে আগের দিনই অতি জরুরি জিনিসপত্র আগে থেকেই কিনে রেখেছেন। তবে সকালের দিকে কর্মজীবীরা কর্মস্থলে যেতে দুর্ভোগে পড়েছেন। বিকেলের পর রাস্তায় গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় পৌঁছান। আর যারা যানবাহনে চড়েছেন তাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৃষ্টির মধ্যে সড়কের যানজটে বসে থাকতে হয়েছে।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে ছাতা মাথায় ও রেইনকোট পরে গন্তব্যে ছুটছেন সারি সারি মানুষ। হঠাৎ বৃষ্টিতে ছাতা না থাকায় অনেকেই মাথায় পলিথিন মুড়িয়েও সড়কে নেমেছেন। গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করেও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ঠাসাঠাসি করে উঠতে পারেন নি অনেকে। বিভিন্ন রুটের লেগুনাগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
সকাল ৮টার দিকে বৃষ্টিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে গণপরিবহনের তীব্র সংকট দেখা দেয়। মিরপুর-১, মিরপুর ১০ ও পল্লবী এলাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে অফিসগামী ও সাধারণ মানুষদের গণপরিবহন, রিকশা ও অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
যাত্রাবাড়িতে বাসের জন্য মানুষ দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। একটি বাস আসলেই হুড়োহুড়ি করে অনেকে উঠতে পারলেও বয়স্ক ও নারী যাত্রীরা ভিড় ঠেলে বাসে চড়তে পারেন নি। এ কারণে তাদের দুর্ভোগের সীমা ছিলো না।
দক্ষিণ যাত্রাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা উৎসব আহমেদ গুলশানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিদিনের মত সোমবার সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বাস থেকে বের হয়ে পড়েছেন বিপাকে। ভিজেছেন বৃষ্টিতে।
তিনি বলেন, গুলশানে অফিসে যাব। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সড়কে বাস নেই। যে দুই-একটা বাস আসছে সেগুলোতে এত হুড়োহুড়ি যে, ওঠা যাচ্ছে না। ভিক্টোরিয়া পার্ক বাস স্টেশনে বাসের সংখ্যা কম দেখা গেছে। যাত্রীদের ছাতা মাথায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যে দুই-একটা বাস আসছে সেগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হয়ে যাচ্ছে।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, নাজীমুদ্দিনরোড ও লক্ষ্মীবাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েকটি এলাকার অলি-গলিতে জলাবদ্ধতাসহ কাদার সৃষ্টি হয়েছে। পথচারীদের বৃষ্টিতে ও পানিতে ভিজে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। মিরপুরের ওয়াসা রোডসহ বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘসময় জলজট দেখা যায়। মুগদা, খিঁলগাও, বাসাবোর নিম্নাঞ্চলে সড়কের জমা পানি অনেকের বাড়িতে ঢুকতে দেখা গেছে।
এছাড়া বৃষ্টির কারণে রাজধানীল গুলিস্তান, শাহবাগ, বাংলা মোটরে যানজট ছিলো বেশি। এছাড়া মহাখালির বিভিন্ন সড়কে খোড়াখুড়ির কারণে ধীরগতিতে গাড়ি চলাচল করেছে। এজন্য মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে মহাখালী পর্যন্ত গাড়ির জট লেগেই ছিলো দিনভর। সাইন্সল্যাব মোড়ের যানজট শাহবাগ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।
দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতাকে পুঁজি করে রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা নিতে দেখা গেছে। রাজধানীল যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে সেইসব এলাকার পানি নিস্কাশনে সিটি করপোরেশনের লোকজনকে কাজ করতে দেখা গেছে। তারা বিভিন্ন ড্র্রেনের ময়লা পরিষ্কার ও ম্যানহোল খুলে দিয়ে দ্রুত পানি সরানোর ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার এমন আবহাওয়া থাকবে না। তবে ঠাণ্ডা অনুভব থাকবে। সাগরের গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার রয়েছে। দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বেড়ে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ