ঢাকার পর চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই গণপরিবহনে ‘হাফ পাস’ তথা অর্ধেক ভাড়ায় চলাচলের সুবিধা পেতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, আগামী শনিবার (১১ ডিসেম্বর) থেকে মেট্রোপলিটনসহ দেশের সব শহরেই শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চালু থাকবে।
তবে ঢাকায় হাফ পাসের জন্য যেসব শর্ত ছিল, সেগুলো কার্যকর হবে অন্য শহরগুলোর জন্যও।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এ ঘোষণা দিয়েছেন।
এসময় তিনি বলেন, মেট্রোপলিটন শহরসহ দেশের যেসব শহরে সিটি সার্ভিস চালু আছে, সেসব শহরে এই ঘোষণা কার্যকর হবে। তবে দূরপাল্লার যানবাহন কোনোভাবেই এই ঘোষণার আওতায় থাকবে না। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের সব শহরে, যেখানে সিটি সার্ভিস চালু আছে, সেখানে হাফ ভাড়ার বিষয়টি আমরা গত কয়েকদিন ধরে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেছি।
১১ ডিসেম্বরের আগে যে কয়দিন সময় আছে, এর মধ্যে মালিক সংগঠনগুলো তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবে। হাফ ভাড়া কার্যকরের সময় অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যখন এ সুযোগটা নেবেন, তখন তাদের অবশ্যই ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে।
হাফ ভাড়া সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, এরপর কোনোভাবেই কার্যকর হবে না- এমন শর্তের কথা উল্লেখ করে পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা আরও বলেন, সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মৌসুমি বন্ধের সময় হাফ ভাড়া কার্যকর থাকবে না।
শহরের বাইরে উপজেলায়, গ্রামগঞ্জে এবং দূরপাল্লার যানবাহনে শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পাবেন না বলে জানিয়েছেন এনায়েত উল্যাহ। তবে কোনো জেলা শহরে সিটি সার্ভিস চালু থাকলে সেখানে শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ পাবেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি শহরগুলোতে মেনে নিয়েছি। তবে দূরপাল্লার যানবাহনে আমাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। গ্রামগঞ্জের যানবাহনের বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা এই বৈষম্য বলে মনে করছি না। আমার শহরে এ সুযোগ দিচ্ছি।
হাফ ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে এনায়েত উল্যাহ বলেন, আশা করছি, ছাত্রছাত্রীরা এবার পড়ালেখায় মনযোগ দেবেন, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরত যাবেন। উল্লেখ্য, ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে গত ৭ নভেম্বর সরকার বাসের ভাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
এরপর গত ২৬ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) পরিচালিত বাসে শিক্ষার্থীরা ‘হাফ পাস’ বা অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা পাবে।
ওই সময়ই মন্ত্রী জানান, হাফ পাস সুবিধা নিতে হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে হবে বৈধ পরিচয়পত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনে এই সুবিধা তারা পাবে না। বাকি দিনগুলোতেও কেবল সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
পরদিন ২৭ নভেম্বর বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহনগুলোতে ‘হাফ পাস’ চালুর বিষয়ে বৈঠক হয়। তবে সেই বৈঠক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। পরে ৩০ নভেম্বর রাজধানীর কাওরান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঘোষণা দেন, ১ ডিসেম্বর থেকে কেবল ঢাকায় বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহনেও হাফ পাস সুবিধা পাবে শিক্ষার্থীরা।
বিআরটিসি বাসে ‘হাফ পাস’ নিতে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছিল, সেসব শর্ত বজায় থাকে বেসরকারি গণপরিবহনেও। এনায়েত উল্যাহর এই ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন জেলাতেও শিক্ষার্থীরা ‘হাফ পাস’ সুবিধার দাবিতে আন্দোলন করেছে।
সংশ্লিষ্টরাও বলছিলেন, সারাদেশেই শিক্ষার্থীদের এই সুবিধা পাওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর (রোববার) এই ঘোষণা এলো।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোরশেদ এলিট, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, একই সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মোহাম্মদ মুসা ও সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ