মৃত্যু চিরন্তন সত্য। কোনো মানুষেই মৃত্যুর উর্ধ্বে নয়। যদিও এই শব্দটি কারোরই পছন্দ নয়। তবে সবাইকেই জীবনের একটা পর্যাযে এই পথেই হাটতে হয়। আমাদের কারোর পরিবারের বা কোনো আপনজনের জীবনাবসানে আমরা শোকসন্তপ্ত হয়ে পড়ি। তখন মাথায় হয়তো কিছুই কাজ করে না কখন কি করতে হবে। যেমন, আমরা ভুলে যাই সঠিক সময়ের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন করার কথা। আজকে নয়া শতাব্দী আপনাদের জানাবে কেনো মৃত্যু নিবন্ধন জরুরি এবং কীভাবে খুব সহজেই আপনিও মৃত্যৃ নিবন্ধন পেতে পারেন।
উত্তরসূরিদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা জানিয়েছেন, একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিদের মধ্যে যখন স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ভাগ হয় তখন ওই ব্যক্তির মৃত্যু নিবন্ধন দরকার হয়। সেজন্য দরকারি ওয়ারিশ সনদ পেতে হলে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।
ব্যাংকে মৃত ব্যক্তির জমা রাখা অর্থ, লাইফ ইনস্যুরেন্সের অর্থ প্রাপ্তির জন্যও মৃত্যু সনদপত্র জমা দিতে হয়। তার জমিজমা, বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কোম্পানির মালিকানা এরকম সকল ক্ষেত্রে নাম জারি অথবা নিজের নামে সম্পদটি রেকর্ড করতে হলে এলাকার রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসে কাগজটি অবশ্যই দিতে হবে।
মৃত ব্যক্তি চাকুরীজীবী হলে, অবসরপ্রাপ্ত হলে তার পেনশন ও অন্যান্য সুবিধাদি দাবি করতে হলেও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। উত্তরসূরিদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগের জন্য মৃত্যু নিবন্ধন দরকার হয়।
মৃত্যু নিবন্ধন ও জনসংখ্যা তথ্য
বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে বেশ সরকারি প্রচারণা থাকলেও মৃত্যু নিবন্ধন উৎসাহিত করতে তেমন কোন কার্যক্রম দেখা যায় না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ, সম্পদ উত্তরসূরিদের মধ্যে ভাগ করার জন্য মূলত মৃত্যু নিবন্ধন প্রয়োজন বলে মনে করা হলেও জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক একেএম নূর-উন-নবী বলেন, ‘একটি দেশের জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতেও মৃত্যু নিবন্ধন খুব জরুরি।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, ‘জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সবকিছুরই রেকর্ড থাকা জরুরি। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতি, এর হার সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। একটি দেশে কর্মক্ষম জনশক্তি কত রয়েছে, কত কমেছে সেটি জানা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য জরুরি। মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য না থাকলে জনসংখ্যার গতিপ্রকৃতি সঠিকভাবে জানা যাবে না।’
‘জনসংখ্যা সম্পর্কিত তথ্য একটি রাষ্ট্রে শিক্ষা বলুন আর চিকিৎসা বলুন, সকল ধরনের পরিকল্পনায় দরকার। সঠিক সংখ্যা না থাকলে আপনি কতজনের জন্য পরিকল্পনা নেবেন, কত অর্থ লাগবে এই সবকিছু আনুমানিক একটা বিষয় হয়ে যায়।’
জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্যের জন্য মৃত্যু নিবন্ধন জরুরি। তিনি বলছেন, বাংলাদেশে দশ বছর পরপর আদম শুমারি হয়ে থাকে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বহু মানুষ মারা যান। ফলে সারা বছর জুড়ে নিয়মিত মৃত্যুর নিবন্ধন না হলে জনসংখ্যার গতিপ্রকৃতির হিসেবে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মৃত্যু নিবন্ধনের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ, বয়স ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণা সহজ হয়।
মৃত্যু নিবন্ধন না হলে জাল ভোটের ঝুঁকি থাকে। সরকারের দেয়া বিভিন্ন ভাতার ক্ষেত্রে জালিয়াতির সম্ভাবনা থাকে।
কিভাবে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ পেতে পারেন
বাংলাদেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, রেজিস্টার অফিসে সরাসরি গিয়ে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সংগ্রহের জন্য আবেদন করা যায়।বিদেশে অবস্থানকালে বাংলাদেশের দূতাবাসে মৃত্যু নিবন্ধন করা যায়। অনলাইনেও এর জন্য আবেদন করা যায়।
বাংলাদেশে প্রায়শই মৃত্যুর তথ্য নিবন্ধন করা হয় না। ওয়েবসাইটে ‘প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন’ অংশে গেলে দেখা যায় জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে যত তথ্য রয়েছে, মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য নেই বললেই চলে।
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য জন্ম সনদ নম্বর প্রয়োজন।
মৃত ব্যক্তির নাম, মৃত্যুর তারিখ, মৃত্যুর স্থান, লিঙ্গ, বাবা-মায়ের নাম, স্বামী-স্ত্রীর নাম এসব তথ্য সরবরাহ করতে হয়। এসব তথ্য নির্ধারিত কার্যালয়গুলোর ডাটাবেইজে ওঠার পর মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দেয়া হয়। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই এটি দেয়া হয়।
মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করলে কোন ফি লাগে না। এরপর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা, তারও পরে করলে ৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ