ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

যাত্রী-শ্রমিক মুখোমুখি

প্রকাশনার সময়: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৪৫ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৪৭

ডিজেলের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনে নতুন করে ভাড়া সমন্বয় করেছে সরকার। এ নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে বিআরটিএ। এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে রাজধানী থেকে সিটিং সার্ভিস এবং গেটলক সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। বলেন, ঢাকায় সিটিং সার্ভিস ও গেটলক বাস সার্ভিস বন্ধ। সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের মাধ্যমে কোনো বাস চলবে না। কেউ গেটলক ও সিটিং সার্ভিস চালালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমন ঘোষণার পরও বাস্তবে সিটিং বা গেটলক সার্ভিস চলছে। বন্ধ হয়নি পরিবহনে ওয়েবিল পদ্ধতি। সিটিং নামে ‘চিটিং ‘ চলছে আগের মতোই। এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিআরটিএ এবং মালিক সমিতির ভিজিল্যান্স টিম রাস্তায় নেমে ‘সিদ্ধান্ত’ বাস্তবায়নে তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু এতে নারাজ পরিবহন শ্রমিক এবং মালিকদের একটি অংশ। তারা নানা ছুতোয় রাজধানীর বিভিন্ন রুটে সকাল থেকে অর্ধেক বাস চলাচল বন্ধ রাখে। অঘোষিত ধর্মঘটের মাধ্যমে তারা সিটিং সার্ভিস ও গেটলক সার্ভিস চালু রাখতে চাপ সৃষ্টি করছে। এতে সড়কে অধিকাংশ গণপরিবহন না থাকায় নতুন করে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।

রাজধানীর মিরপুর রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে। ভোরের দিকে কিছু বাস চলাচল করলেও পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত রুটে কিছু বাস চলেছে। বাড্ডা, নতুন বাজার রুটের কোনো বাস চলাচল করেনি। সিটিং সার্ভিসের নামে বেশি ভাড়া আদায় করতে না পারায় মিরপুর রোডের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এই অঘোষিত ধর্মঘট ডেকেছে বলে নয়া শতাব্দীকে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

তারা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বিআরটিএ-এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দূরপাল্লার পরিবহন ও নগরীর গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। তারা বাড়িয়েছে ২৭ শতাংশ। অপরদিকে, নতুন ভাড়ার ওপর সিটিং বাসগুলো ভাড়া নির্ধারণ করেছে ১৫ শতাংশ। এই নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে মতের অমিল হওয়ার কারণে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবহন চালক-হেলপাররা বলছেন, প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তর্ক ও ঝগড়া হচ্ছে। নতুন ভাড়া অনুযায়ী, যাত্রীরা দিতে চায় না। এদিকে, পরিবহনের মালিকরাও পরিবহনের জমা ভাড়ার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চাচ্ছেন। এখন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে দিনে ৪টি ট্রিপ দিলে তেল খরচসহ সব মিলিয়ে আমাদের বেতনও ওঠে না। এতে আমরা বিপাকে পড়েছি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা গাড়ি বন্ধ রেখেছি।

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, কোনো ধরনের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়নি। শুধু মিরপুর রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাস বন্ধ রাখার বিষয়টি আমরা জেনেছি। সমাধানের চেষ্টা করছি।

এদিকে, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ভাষ্য অনুযায়ী, মিরপুর রুটের বাস চলাচল বন্ধের বিষয় অবগত হলেও রাজধানীর বিভিন্ন রুটেও গণপরিবহনের সংকট দেখা দিয়েছে।

কথা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রাজীব নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি নয়া শতাব্দীকে বলেন, সকাল থেকেই বাস সংকট। অফিসে কিভাবে যাব সেটাই ভাবছি। পরিবহন শ্রমিকরা মাঝে মাঝে এমন সব কাণ্ড করে বসে যেটার কোনো মূল্য থাকে না। এমনই ভাড়া বাড়িয়েছে সেটার জন্য হয়রানি, তারপর আবার গণপরিবহন বন্ধ; একেবারেই খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিবহন শ্রমিকদের এমন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ জনগণ।

মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরাগামী পরিস্থান পরিবহনের কাশেম নামের এক যাত্রী বলেন, গত মঙ্গলবার হঠাৎই বাস বন্ধ করে দেয়ায় বিপদে পড়েছিলাম। উত্তরার নিজ অফিস থেকে মিরপুর আসতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়েছে। বাস না পেয়ে সিএনজিতে ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাসায় এসেছি। সরকার ও বাস মালিকদের কাছে সাধারণ যাত্রীরা জিম্মি অবস্থায় আছে।

মিরপুর-১০ নম্বরে প্রজাপতি পরিবহনের হেলপার রফিক বলেন, সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে। এখানে তো আমাদের হাত নেই। তারপরও যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে ঝামেলা করেন। তেলের দাম বাড়ার কারণে এত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ভাড়া বাড়ায় আর যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের মারামারি করতে হয়। মঙ্গলবারের ঘটনার পর মালিক পক্ষের নির্দেশে বাস বন্ধ রেখেছিলাম। তবে রাতেই মালিকপক্ষ সকাল থেকে বাস বের করতে বলে। সে জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি।

এর আগে গত মঙ্গলবার মিরপুর ১২ নম্বর থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর কন্ডাক্টরের সঙ্গে যাত্রীদের একাধিক বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে, বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে। এরপর দুপুর থেকে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ে পরিবহন শ্রমিকরা। সন্ধ্যার পরে কিছু বাস চলাচল করে। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই আবার পরিবহন শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ