ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইইউ বিএনপির ‘অক্সিজেন’!

প্রকাশনার সময়: ১৭ নভেম্বর ২০২১, ০৫:১১

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো ২ বছর। নির্বাচন হতে পারে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ’২৪ সালের শুরুর দিকে। তবে এবারের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর রয়েছে বিশেষ ‘আগ্রহ’। প্রতিটি ভোটারের ভোট নিশ্চিত করার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে থাকতে চায় দেশগুলো। এরই মধ্যে ওই সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও ফিরিয়ে আনার দাবি দলটির। বিএনপির এই দাবির সঙ্গে একট্টা সরকারবিরোধী দলগুলোও।

এমতাবস্থায় আসন্ন সংসদ নির্বাচন গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করার কথা বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পর্যায়ক্রমে এই তালিকায় আরো যোগ হতে পারে বিশ্বের ক্ষমতাধর অন্য দেশগুলোর নামও। মূলত দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাইছে দেশগুলো। সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার কথা বলায় ইতোমধ্যে বিএনপি আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। হামলা মামলায় জর্জরিত দলটির নেতাকর্মীরা ‘অক্সিজেন’ পেতে শুরু করেছেন বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের গুরুত্ব এতটুকুই যে, তারা যদি সঠিকভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে কিনা, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে কিনা, সেটা তারা বুঝতে পারেন। কারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই শুরু হয়। তারা তাদের পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট মহলে তুলে ধরলে ইতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে আগেভাগেই পর্যবেক্ষণ করার কথায় বলায় বিএনপির পালে হাওয়া লাগতে শুরু করছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি এ কথা আমরা বারবার বলে আসছি। আগের দিন রাতে ‘ভোট ডাকাতি’ করে ক্ষমতায় বসেছে আওয়ামী লীগ। এ কথাটি এখন সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। তাই এবার ইইউ আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও পর্যবেক্ষণ করার কথা বলছে। দুই বছর আগেই পাতানো নির্বাচন বিষয়ে সাবধান করছেন সরকারকে।

এছাড়াও সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১০০ গণতেন্ত্রর দেশের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেখানে বাংলাদেশ নেই। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে কতটা গণতন্ত্র আছে। আগের নির্বাচনগুলোতে ভোট কেমন হয়েছে। স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী লগ্নে এটা খুবই হতাশাজনক। ফলে দুই বছর আগেই আগামী নির্বাচন তারা পর্যবেক্ষণ করা বলছে। গণতন্ত্রে পক্ষের অন্য দেশগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে। আমরা বিশ্বাস করি, অবাধ ও স্ষ্ঠু নির্বাচন হলে দল ক্ষমতায় যাবে।

সূত্রমতে, গত সোমবার ঢাকায় ইইউর নতুন রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, নির্বাচন কোনো ইভেন্ট বা আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিটি স্টেকহোল্ডারের এ দেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। কারণ নির্বাচনের সঙ্গে দেশের সার্বিক অগ্রগতি সম্পৃক্ত। এতে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। তাই আমরা স্টেকহোল্ডার বা বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে মনিটর করি, এটা কোনো হস্তক্ষেপ নয়। স্টেকহোল্ডার বা অংশীদার হিসেবে দিনশেষে আমরা দেখতে চাই, প্রতিটি ভোটার যেন এটা মনে করে যে, তারা যে ভোট দিয়েছেন তা কাউন্ট বা গণনায় এসেছে। তাই আগামী নির্বাচন ইইউ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হতে এখনো আরো দুই বছর বাকি আছে। ইইউ দেখতে চায়, ভোট দেয়ার চর্চা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। ইইউ বাংলাদেশে ভোট ও নির্বাচনের ওপর তাদের চোখ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনীতি ও উন্নয়নের পাওয়ার হাউস। স্বাভাবিক কারণেই এ দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নির্বাচন ও ভোটসহ সার্বিক বিষয়ে বিশ্বের আগ্রহ রয়েছে। তবে আগামী নির্বাচন কেমন হচ্ছে এ বিষয়ে বিশ্বের আগ্রহ থাকার অর্থ এ নয় যে, ভোটে হস্তক্ষেপ করতে চায় তারা।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নয়া শতাব্দীকে বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন বলে কিছু নাই। দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে দরকার তত্ত্বাবধায়রক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, ইইউ পরিষ্কার করে বলেনি শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন কিনা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখেছি কেউ ভোট দিতে পারেনি। ফলে এখানে আসলে পর্যবেক্ষণের কিছু না।

দুদু আরো বলেন, সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গণতন্ত্রের পক্ষের দেশগুলোকে নিয়ে সম্মেলন করছেন। স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে আমন্ত্রণ না পাওয়া খুবই দুঃখজনক। প্রমাণ হয়েছে ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্বের রাষ্ট্রদূতরা যদি এগিয়ে আসেন এটা পজিটিভ দিক। তবে বিএনপি আগে দেখবে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।

জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুক নয়া শতাব্দীকে বলেন, ইইউ বা গণতন্ত্রের দেশগুলো তাদের দেশের গণতন্ত্র, জনগণের নিরাপত্তা, নির্বাচন ব্যবস্থা ও সরকার পরিচালনা সবকিছুই সম্পর্কে অবগত। তাই ওই সব দেশের রাষ্ট্রদূতরা গত নির্বাচনগুলোও পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তবে ওই পর্যবেক্ষণের ফলাফল কতটুকু ইনক্রিমেন্ট হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখিনি। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলেই জো বাইডেনেরও আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের দুই বছর বাকি থাকতে পর্যবেক্ষণের কথা বলছেন এটা পজিটিভ। কারণ সরকারকে দুই বছর আগেই সাবধান করে দেয়া যেন সরকার অতীতের মতো আর নির্বাচন না করে। বিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যেন নির্বাচন হয়। আসন্ন সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেই কথাটি বলতে চেয়েছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব নয়া শতাব্দীকে বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। কারণ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে জবাই হয়ে যাওয়ার মতো। যেটা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা ইসলাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। যদি না নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত অ্যাক্টররা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে সুষ্ঠু ভোট হবে না। আর আগামী সংসদ নির্বাচনে ইইউর পর্যবেক্ষণ এ বিষয়ে পার্টির মহাসচিব গণমাধ্যমে মতামত জানাবেন।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ