ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছকে এগোচ্ছে জামায়াত

প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২১, ০৬:৫৯
ফাইল ছবি

সরকারের কঠোর নজরদারিতে প্রকাশ্যে না পারলেও অনলাইনে পুরোদমে সরব আছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো, ভিগো, জুম অ্যাপসসহ অনলাইনের নানা যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সক্রিয় হচ্ছে দলটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব সুবিধা ব্যবহার করে ফের সংগঠিত করছে নিজেদের। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে চালিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত আলোচনা সভা ও অনুষ্ঠান।

প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করার পরিবর্তে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ঘরোয়া বৈঠক করে দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করছে। কৌশলের অংশ হিসেবে শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রকাশ্যে না এসে সাথী ও সমর্থকদের দিয়ে ফের নতুনভাবে সংগঠন গোছানোর কাছ করছেন। এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করে গোপনে ও প্রকাশে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।

জানা গেছে, গত এক দশক ধরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয় বন্ধ। সারাদেশের নেতাকর্মীরা মামলায় বিপর্যস্ত। দলের নিবন্ধনও বাতিল। মানবতাবিরোধী অপরাধে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যুদ- হওয়ায় ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে কোথাও কোনো ভালো খবর নেই দলটির। এসব সত্ত্বেও থেমে নেই দলটির কার্যক্রম। নেতারা আত্মগোপনে থেকেই চালাচ্ছেন দলীয় কর্মকাণ্ড। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করছে। দলের সর্বোচ্চ ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শূরায় সারাদেশ থেকে বাছাই করা তরুণ নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সারাদেশে দলের গুরুত্বপূর্ণ শাখা কমিটিগুলোতেও তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতার আতংকের মধ্যেই দেশজুড়ে মাসব্যাপী সিরাতুন্নবী (সা.) বিষয়ক ১০টি প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে ভার্চুয়ালি। বিজয়ীদের মধ্যে গত শনিবার রাতে নগদ অর্থসহ সর্বমোট ৩০ লাখ টাকার পুরস্কার বিতরণ করে দলটি।

ঢাকা মহানগর জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে অনেক গোছানো। আপাতত সংগঠনকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দিতে পরিকল্পনা মাফিক কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে দলের আর কোনো এজেন্ডা নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় মজলিস শূরার একজন সদস্য বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের নজর এড়িয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জামায়াতকে সুসংগঠিত করতে কাজ হচ্ছে।

জামায়াত সূত্র জানায়, সিরাতুন্নবী (সা.) প্রতিযোগিতায় নারী, পুরুষ ও শিক্ষার্থী মিলে ৩২টি গ্রুপে প্রায় ২০ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেন। সারা দিনে পাঁচ পর্বের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৩২ জন নেতা। এর মধ্যে ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত মৃত গোলাম আযমের বড় ছেলে মামুন আল আযমী, মতিউর রহমান নিজামীর বড় ছেলে নকীবুর রহমান, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ মাবরুর এবং মৃত সাবেক আমির মকবুল আহমাদের ছেলে ইসমাইল হোসেন। দেশের বাইরে থেকেও আলোচনায় অংশ নেয় অনেকে। এ ছাড়াও মাঝে মাঝে ছোট পরিসরে গোপনেও বৈঠক করেন দায়িত্বশীল নেতারা। এ রকম একটি বৈঠক করতে গিয়েই গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বসুন্ধরার আবাসিক এলাকার থেকে আটক হয়েছেন সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ শীর্ষ কয়েক নেতা। জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সরকারবিরোধী ২০ দলীয় জোটের শরিক তারা। প্রকাশ্য রাজনীতি কিংবা কর্মসূচিতে অনেকটাই অনুপস্থিত দলটি। যদিও সরকার বলছে, জামায়াতের কোনো কার্যক্রমে বাধা দেয়া হচ্ছে না। তবে জামায়াতের দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে তাদের কর্মসূচি পালনে অনুমতি দেয় না। এমতাবস্থায় অনলাইনে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে দলটি। অনলাইন কার্যক্রম দেশব্যাপী আরও ব্যাপকভিত্তিক চলছে।

বর্তমানে সাংগঠনিক কার্যক্রম কেমন চলছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আমাদের কার্যক্রম চলছে যথারীতি। আগের তুলনায় কাজ বেশি হচ্ছে। অফিসে অফিসে তালা। সরকার অফিস খুলতে বাধা দিচ্ছে। অফিস খোলা থাকলে আরো বেশি কাজ হতো।

তিনি বলেন, ঢাকায় কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয় দুটিই একদশক ধরে বন্ধ। এ জন্য নেতা অনুসারীদের বাসা কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে জামায়াতের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নানা কারণে ২০১১ সাল থেকে এই অফিস দুটি তালাবদ্ধ করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং অতীতের ভুলভ্রান্তি ও ব্যর্থতা চিহ্নিত করে আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ