জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। সে অনুযায়ী, রাজধানীর হাতিরঝিলে চক্রাকার বাস সার্ভিসে ‘পাঁচ টাকা’ করে বাড়ানো হয় ভাড়া। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এর প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার চক্রাকার বাস সার্ভিস আগের ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন সেবা শুরু করে।
যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে গত সোমবার বেশি ভাড়া নিয়েছে চক্রাকার বাস। তারা কোনো নিয়ম-নীতি মানছে না। কিলোমিটার না মেনেই ভাড়া নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করায় আগের ভাড়ায় ফিরে গেছে চক্রাকার বাস সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি কিলোমিটার বা মিটার মেপে ভাড়া আদায় করা সম্ভব না। তাদের টিকিট কাউন্টারগুলোও মিটার মেপে বসানো হয়নি। ফলে আগের নির্ধারিত ভাড়া থেকে প্রতি কাউন্টারে গড়ে পাঁচ টাকা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। তবে যাত্রীরা প্রতিবাদ করায় নতুন ভাড়া স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাতিরঝিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
৩০২ একর জায়গার ওপর হাতিরঝিলকে নান্দনিকভাবে সাজিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংস্থাটি জানায়, হাতিরঝিলের চারপাশে ১৬ কিলোমিটার একমুখী সড়ক। ২০১৬ সালে এই সড়কে যাত্রী পরিবহনে ১০টি মিনিবাস চালু করা হয়। এর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এইচ আর ট্রান্সপোর্ট। আর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রাজউক।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতিরঝিলে যাত্রী পরিবহন করছে চক্রাকার বাস সার্ভিস। এর মধ্যে রামপুরার ছয় নম্বর কাউন্টারের সামনে পুনর্নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টানিয়ে রেখেছে এইচ আর ট্রান্সপোর্ট। এই তালিকা অনুযায়ী, বাড্ডা-রামপুরা থেকে মহানগর, মধুবাগ, বউবাজার, হ্যাপি হোমস, শুটিং ক্লাবের ভাড়া ১৫ টাকা। এফডিসি মোড় পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা। রামপুরা থেকে চক্রাকার ঘুরে আবার রামপুরা গেলে ভাড়া ২০ টাকা। তবে কাউন্টারের সামনে এমন তালিকা টানানো থাকলেও আগের নিয়ম অনুযায়ী, ভাড়া নিচ্ছে এইচ আর ট্রান্সপোর্ট।
রফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, হাতিরঝিলে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য প্রকল্প এলাকার ১০টি জায়গা নির্ধারণ রয়েছে। এর মধ্যে রামপুরা, মধুবাগ, এফডিসি মোড়, বউবাজার, শুটিং ক্লাব ও মেরুল বাড্ডার ছয়টি কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যায়। এসব কাউন্টারে গত সোমবার পাঁচ টাকা করে বেশি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানালে সবাই সায় দেন।
এইচ আর ট্রান্সপোর্টের পরিদর্শক জাহিদ হোসেন জানান, তারা আগের ভাড়া নিচ্ছেন। চক্রাকার বাস সার্ভিসে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। মালিক পক্ষ থেকে ভাড়া বাড়ানোর কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে গত সোমবার বেশি ভাড়া নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন জাহিদ।
এর আগে গত রোববার গণপরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বাসভাড়া বাড়ায় সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বর্তমান বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৩৮ পয়সা গুনতে হবে। এ ছাড়া বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, সেটা ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৪৫ পয়সা। মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। সেটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
অর্থাৎ দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ল। এর আগে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। এরপরই মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে তিনদিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট করেন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ