ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে পিষ্ট মধ্য ও নিম্নবিত্ত

প্রকাশনার সময়: ০৮ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০৮

আগে থেকেই বাজারের সব পণ্যের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। সঙ্গে যোগ হয় পরিবহন ধর্মঘট। এর প্রভাবে বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের দাম। প্রতিটি পণ্য কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ফলে কঠিন হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনযাত্রা। গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

নিত্যপণ্য বিক্রেতারা বলেছেন, ধর্মঘটের কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় নিত্যপণ্যের সরবরাহ কম। আর বিভিন্ন মাধ্যমে কিছু সবজি বাজারে আনা হলেও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প নেই।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। দুই দিন আগে যে বেগুন ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই বেগুন এখন ৭০-৮০ টাকা। ১২০-১৩০ টাকার শিম বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকায়। ৩০-৪০ টাকার ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া ৫-১০ টাকা বেড়ে গাজরের কেজি ১৩০-১৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৬০, টমেটো ১২০-১৩০, বরবটি ৫০-৬০, পটোল ৪০-৫০, মুলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ৪৫-৫৫, লাউ ৫০, মিষ্টি কুমড়া ৬০ ও করলা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ বাজারভেদে ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চড়া পেঁয়াজের দামও। দুই দিন আগে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫০-৫৫ টাকায় পাওয়া গেছে। একই মানের পেঁয়াজ এখন ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আটা, ময়দা, শুকনা মরিচ, আলুসহ বেড়েছে আরো কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সাধারণত শীতের মৌসুমে সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। মাত্র শীতের সবজি বাজারে আসছে। দামও কমের দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে দাম আরো বাড়বে এবং মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, প্রতি কেজি প্যাকেট আটায় ৩ টাকা বেড়ে ৩৮-৪০ টাকা ও প্যাকেট ময়দায় ২ টাকা বেড়ে ৪৮-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২৪০ টাকায়। এ ছাড়া আলু কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২-২৫ টাকা কেজি দরে। দাম বাড়ার দিকে পিছিয়ে নেই মাছের বাজারও। যে কোনো ধরনের মাছ কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। বড় আকারের কাতল, রুই ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ২৮০-৩০০ টাকায় পাওয়া গেছে।

কোরাল ৪৫০-৬০০, কৈ ১৪০-১৮০, শিং ৩০০ -৪০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৭০, চিংড়ি ৫৫০-৭৫০, পাবদা ২৫০ -৩৫০, পাঙাস ১২০-৬০, টোনা ২২০-২৫০, আইড় ৩০০-৩৫০ ও টেংরা আকারভেদে ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজি ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবজির দামে প্রভাব পড়েছে। তেলের দাম বাড়ায় পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় আসতে আগের চেয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হবে। এই বাড়তি ভাড়া সবজির দামের সঙ্গেই যুক্ত হবে। তাই শীতের ভর মৌসুমেও সবজির দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানান, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি এনে ঢাকার চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবজির সরবরাহ একদম কমে গেছে। এতে করে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন আড়ত থেকে কিছু সবজি বাজারে আনা হলেও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে।

মাছের আড়তের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, গেল দুই দিন মাছ কিনতে তাদেরও বেশি টাকা গুনতে হয়েছে। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় সরবরাহও কম। বেশি দামে কেনার কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে চড়া দামে। না হলে লোকসান গুনতে হবে। বাজারে গিয়ে সবজির দাম শুনে অনেক ক্রেতা সবজি না কিনে ফেরত যাচ্ছেন। খুব প্রয়োজন যাদের, তারা কিনলেও কপালে তাদের চিন্তার ভাঁজ। বলছেন, শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের সবজি বাজারে ওঠে। এখন যদি সবকিছু নাগালের বাইরে থাকে তাহলে অন্য সময় অবস্থা কী হবে?

জাহিদ হাসান নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এলে দাম শুনেই চোখেমুখে যেন অন্ধকার দেখি। সব পণ্যের দাম চড়া। আর একবার দাম বাড়লে আর কখনো কমানো হয় না। অথচ আয়- রোজগার তো বাড়ে না। এ অবস্থায় আরো বাড়লে আমরা সাধারণ মানুষ বাঁচব কীভাবে। শুধু ঢাকাতেই নয়, বাইরেও প্রভাব পড়েছে এই ধর্মঘটের।

সিলেট প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘটের প্রভাবে নগরের অধিকাংশ বাজারেই দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। অধিকাংশ নিত্যপণ্যেরই দাম বেড়েছে। সিলেটের চালিবন্দরের ফারুক বাণিজ্যালয়ের পাইকারি সবজির ব্যবসায়ী ফারুক আহমদ জানান, কাঁচামাল একদিনের ওপর রাখা যায় না। তাই প্রতিদিন আমদানি করতে হয়। কিন্তু পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। তাই যেগুলো স্থানীয় এলাকার সবজি আসছে তার দামও অনেক বেশি। কারণ ধর্মঘট থাকায় পরিবহন খরচ বেড়েছে।

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বরিশালে বাজারে কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ছে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম। তবে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধের প্রভাবে বরিশালে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। দুই দিনের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। বরিশাল নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। নগরীর পুরানবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০, বাঁধাকপি ৫০, মুলা ৪০, ধনেপাতা ১৫০, টমেটো ১৬০ ও ফুলকপি ৬০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৭০, বরবটি ৮০, করলা ৮০, ঢেঁড়স ৮০, চিচিঙ্গা ৫০, কাঁচামরিচ ১২০-১৫০, গাজর ১৫০, শসা ৩০, পেঁপে ২৫, চাল কুমড়া ৪০, মিষ্টি কুমড়া ৩৫, পটোল ৫০ ও ঝিঙে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম কমার লক্ষণ নেই। এ ছাড়া শুক্রবার-শনিবার থেকে আজ (রোববার) দাম বেশি। প্রায় সব ধরনের সবজি ৫-১০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

বাজারে মাছের দামও চড়া। মাঝারি সাইজের ইলিশ কেজিপ্রতি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০, শিং প্রতি কেজি ৬০০-৮০০, কাতল ৩৫০ -৬০০, মাঝারি সাইজের শোল ৫৫০-৬৫০ ও ছোট সাইজের চিংড়ি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুরানবাজারে কথা হয় অহিদুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, সব জিনিসের দামই বেশি। রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এখন সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে। সামনে সবজির দাম আরো বাড়বে। চোখে অন্ধকার দেখছি। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে ছেলে মেয়ে নিয়ে উপোস থাকতে হবে।

বহুমুখী সিটি মার্কেটের পাইকারি মোকাম শাহরিয়ার বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আলী হোসেন জানান, পরিবহন ধর্মঘট হলেও শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া ও যশোর থেকে বেশ কয়েকটি সবজির ট্রাক এসেছে। উল্লেখ্য, গত বুধবার প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর ফার্নেস অয়েলে বাড়ানো হয়েছে লিটারপ্রতি ৩ টাকা। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের ওপর।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ