নব্য জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছিরকে (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের ডিসপোজাল ও সিটি ইনভেস্টিগেট টিম।
২০১৭ সালের দিকে জঙ্গিবাদে জড়ান বাছির। জঙ্গিবাদের অভিযোগে এর আগে ২০১৮ সালে তাকে গ্রেফতার করেছিল সিটিটিসি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, কারাগারে এক বছর তিন মাস থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করেন নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে জনের সঙ্গে। এরপর তার যোগাযোগ হয় নব্য জেএমবির সুরা সদস্য আবু মোহাম্মদের সঙ্গে। তাদের দেওয়া নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই রাতে পুরনা পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমা রেখে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটান বাছির।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে পল্টনের পুলিশ চেকপোস্টে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় ঢাকা শহরে এমন আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনার প্রত্যেকটিরই রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে এবং জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ পুলিশ চেকপোস্টে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল সেই ঘটনার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছির।
তিনি আরও বলেন, বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি তার বাড়ি কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকায়। তিনি ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। জেল থেকে জামিন পেয়ে আবার নতুন করে জঙ্গিবাদে জড়ান তিনি। জেল থেকে বের হয়ে নব্য জেএমবির সামরিক শাখায় কাজ করতে শুরু করে। নব্য জেএমবির সুরা সদস্য আবু মোহাম্মদ তাকে সুবিধাজনক অবস্থানে পুলিশের ওপর হামলার নির্দেশনা দেয়। পরে তাকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম কেনার জন্য টাকা দেয়।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, বাছির প্রথমে রাজধানীর তোপখানা রোডে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। পরে মাহাদী ও আবু মোহাম্মদ তাকে সেই বাসাটি ছেড়ে একা বাসা নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি মান্ডা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসা থেকেই হামলার জন্য বোমা তৈরি করেন বাছির। পরে সুবিধাজনক স্থান হিসেবে গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে পুরানা পল্টনের পুলিশ চেকপোস্টে বোমাটি রেখেছিলেন। তিনি বোমা রাখার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খুঁজছিলেন যেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। ফলে সবগুলো ঘটনার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া গেলেও পল্টনের ঘটনার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় তাকে যারা নির্দেশ দিয়েছিল আমরা তাদের নামও পেয়েছি। আরও কোনো জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা এ ঘটনায় জড়িত কি-না এ বিষয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজকে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করব।
জামিনে বের হওয়া কতজন জঙ্গি সিটিটিসির নজরদারিতে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা হয়তো সবাইকে মনিটরিং করতে পারিনি বা পারি না, কিন্তু জামিনে বের হওয়া অধিকাংশ জঙ্গিদের আমরা নানা কৌশলে মনিটরিং করি। বাছিরও আমাদের মনিটরিংয়ের ছিলেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ মান্ডা চলে যাওয়ায় আমাদের নজরদারিতে ছিলেন না। তোপখানা রোডে যখন তিনি থাকতেন তখন মনিটরিংয়ের ছিলেন। তিনি একটি স্থানীয় ইলেকট্রনিক কোম্পানিতে চাকরি করতেন, সে পর্যন্ত আমাদের নজরদারিতে ছিলেন। ২০০১ সাল থেকে ধরলে অনেক জামিন পাওয়া জঙ্গি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। জামিন পাওয়ার পর আমরা প্রথম যে বিষয়টি দেখি, কোনো জঙ্গি তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন বা আবার পুনরায় সংগঠনের কাজ কর্মে যুক্ত হয়েছেন। আমরা যাকে মনে করি নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন তাকে আমরা নজরদারিতে রাখি।
কারাগারে যেসব জঙ্গিরা রয়েছে তাদের নজরদারির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কারাগারে আমরা নজরদারি করতে পারি না, কারণ আমাদের সেই অনুমতি নেই। তবে আমরা কারাগারে নজরদারির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। কীভাবে কারাগারে থাকা জঙ্গিদের ডি-র্যাডিকেলাইজেশন করা যায় এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করব। আশা করছি এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া পাব।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ