ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কারাগারে ফাঁসির আসামির সুবিধাদি জানতে চান হাইকোর্ট

প্রকাশনার সময়: ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৪৪

বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে থাকা মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১ হাজার ৯৮৭ আসামির সুযোগ-সুবিধার একটি লিখিত প্রতিবেদন আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন। এর আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে কারা অধিদফতর থেকে পাঠানো তথ্য আদালতে জানান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, দেশের কারাগারগুলোতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে কনডেম সেলে বন্দি রয়েছে মোট এক হাজার ৯৮৭ জন কয়েদি। এর মধ্যে পুরুষ কয়েদি রয়েছেন এক হাজার ৯৩৩ এবং নারী কয়েদি ৫৪ জন। তবে দেশে মোট কনডেম সেলের সংখ্যা দুই হাজার ৫৯৯টি। ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ হিসাব দিয়েছে কারা অধিদফতর।

কারাগারগুলোতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কনডেম সেলে থাকা সকল বন্দির তথ্য চেয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট করেন।

রিট আবেদনকারী হলেন, চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুর বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এ তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন।

রিট আবেদনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে আবদ্ধ রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়েছে।

একইসঙ্গে দেশের সব জেলের কনডেম সেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাখার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে (সুযোগ, সুবিধা) কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার সিনিয়র জেল সুপারকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়।

প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকারবলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল দায়ের করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ওই ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে।

কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়। দেশের কারাগারগুলোতে ২ হাজার ৫ জন ফাঁসির আসামি কনডেম সেলে বন্দি আছেন।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ