বিদেশি কিছু ওষুধ কোম্পানির নাম চলে আসার পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ আইন-২০২১ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা। এটি রিভিউ করে আবার মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নয়া শতাব্দীকে বলেন, এই খসড়ায় অনেক বিষয় চলে এসেছে, তাই সেখান থেকে কিছু বিষয় বিধিতে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা, সেটি করে আইনটাকে আরো ‘কনসাইজ’ (সংক্ষিপ্ত) করা যায় কিনা, তা রিভিউ করতে বলেছে মন্ত্রিসভা।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক এই সিদ্ধান্ত দেয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
সচিব বলেন, এই আইনটাকে একটু রিভিউ করতে বলা হয়েছে। সে জন্য আজকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়নি। তাই এটা নিয়ে আর আলোচনা করতে চাচ্ছি না। রিভিউ করে আবার মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওষুধ আইনে কিছু অবজারভেশন করতে বলা হয়েছে। আর রিভিউ করবে আইন মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল যারা বিশেষজ্ঞ আছেন তারা। কিছু কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নাম আগে নিয়ে আসা হয়েছে, এ বিষয়গুলো বিধিতে নিয়ে যেতে হবে। এগুলোই করতে হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী নয়া শতাব্দীকে বলেন, ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের নাম তো বাড়তেও পারে। তাহলে আবার আইনও সংশোধন করতে হবে। কিন্তু আইন তো দীর্ঘ মেয়াদি বিষয়। তাই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বিধিতে নিয়ে গিয়ে, আইনটাকে আরো কনসাইজ করার বিষয়টি রিভিউ করতে বলেছে মন্ত্রিসভা। রিভিউ করতে কত সময় লাগতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না।’
প্রসঙ্গত, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের লাইসেন্স ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ওষুধ উৎপাদন বা আমদানি করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের বিধান যুক্ত করে ‘ঔষধ আইন-২০২১’ এর খসড়া তৈরি করা হয়।
জনসাধারণের চলাচলের পথ বা মহাসড়ক কিংবা ফুটপাতে ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধের বিধান রাখা হচ্ছে আইনের খসড়ায়। এ সংক্রান্ত অপরাধের বিচার করতে ‘ঔষধ আদালত’ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত লাইসেন্স ছাড়া অথবা লাইসেন্সে আরোপিত শর্তবহির্ভূতভাবে ওষুধ মজুদ, প্রদর্শন, বিক্রয়, বিতরণের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অথবা ওয়েববেজড প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কেউ এই বিধান লঙ্ঘন করেন তাহলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইনে লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর হবে এই কর্তৃপক্ষ। প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়।
আইনে আরো বলা হয়, জনসাধারণের চলাচলের পথ, মহাসড়ক, ফুটপাত, পার্ক, কিংবা গণপরিবহনে অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক, হারবাল অথবা অন্য কোনো ওষুধ ফেরি করে বিক্রয় কিংবা বিনামূল্যে বিতরণ করা যাবে না অথবা বিক্রয় কিংবা বিনামূল্যে বিতরণ করার প্রস্তাবও করা যাবে না। ‘যদি কেউ আইনের এই বিধান লঙ্ঘন করেন তাহলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
যেক্ষেত্রে কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি কোনো কোম্পানি অথবা করপোরেশন অথবা প্রতিষ্ঠানের মালিক, প্রত্যেক পরিচালক, অংশীদার এবং কর্মকর্তা যারা জ্ঞাতসারে অথবা তাদের সম্মতিতে উক্ত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তারা সবাই দোষী সাব্যস্ত হবেন। তবে কোনো অভিযুক্ত যদি প্রমাণ করতে পারেন যে ওই অপরাধ তার অজ্ঞাতসারে হয়েছে কিংবা তিনি অপরাধ সংঘটনে বাধা দিয়েছেন তাহলে তিনি দায়ী হবেন না।
এসব অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে ঔষধ আদালত অথবা ক্ষেত্রবিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ছাড়া অন্য কোনো আদালত এই আইনের অধীন দণ্ডনীয় কোনো অপরাধের বিচার করতে পারবেন না। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত প্রতিবেদন ছাড়া কোনো ঔষধ আদালত বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই আইনের অধীন দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করতে পারবে না। গেজেট দ্বারা প্রয়োজনানুযায়ী ঔষধ আদালত প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।
অপরাধ তদন্তে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতোই তার অধীন কোনো কর্মকর্তা বা পরিদর্শককে অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব দিতে পারবেন।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ