ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘পূজামণ্ডপে সহিংসতার সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক নাই’

প্রকাশনার সময়: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৩৯ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২২, ১৫:১৪

পূজামণ্ডপে সহিংসতার সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক নাই বলে মন্তব্য করেছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পূজামণ্ডপে মূর্তির পায়ের কাছে কোরআন রাখার অভিযুক্ত ইকবাল একজন ভবঘুরে। ইকবালসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার করে প্রকৃত রহস্য উৎঘাটনের সফল সমাপ্তির চেষ্টা করা হচ্ছে।’

শনিবার (৩০ অক্টোবর) তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বৃদ্ধিতে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার নিয়ে এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কুমিল্লার পূজামণ্ডপে মূর্তির পায়ের কাছে কোরআন এর ছবি ফেসবুকে যে পোস্ট করেছিলো তার নাম সুজন। এই ছোট ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে অন্তত্য ১৬ টি জেলায় দ্রুত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ আজ সারা বিশ্বে যে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পারিবারিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের মাধ্যমে তরুণ জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে ফেসবুকে গুজব তাদেরকে বিপথগামী করতে না পারে।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘অনেক মেধাবী সন্তানরাও ফেসবুকের কনটেন্ট দেখে উগ্র জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। জঙ্গিবাদী চক্র তাদের অপপ্রচার চালানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া বেছে নিয়েছে। যার মাধ্যমে তারা আজ অনেক তরুণকে বিপথগামী করছে। তবে জঙ্গিবাদের অপতৎপরতা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলছে। অপপ্রচারকারীরা নামে-বেনামে ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক, আইপি টিভি অনলাইন পোর্টালসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা রকম পেজ, গ্রুপ, ইভেন্ট খুলে যে যার ইচ্ছামতো নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে। তথাকথিত ব্রেকিং নিউজের নামে নানা গুজবের ভিডিও বানিয়ে গায়েবি খবর ছড়িয়ে সমাজে নানা রকম বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এর দায় এড়াতে পারে না। তবে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ছাড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা মোটেই ঠিক না। মানুষের ধর্ম মানুষের উপর থাকা ভালো।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনার পর বড় দুটি দল একে অপরকে দোষারোপ করে আসায় প্রকৃত অপরাধীরা আড়াল হয়ে যেতে পারে। তাই ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনার পর যে কোন মন্তব্য, বক্তব্য বিচার বিশ্লেষন করে দেওয়া উচিত। সম্প্রতি দুর্গাপূজার সময় দুষ্কৃতিকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করছিলো। ফেইসবুকে কোরআন অবমাননার উস্কানিমূলক অভিযোগের পর কুমিল্লায় মন্দিরে ভাংচুরসহ চাঁদপুর, চৌমুহনী, পীরগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বী নিরীহ মানুষের উপর সহিংসতা চালানো হয়। এসব ঘটনা বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির উপর চরম আঘাত। বিগত সরকারের আমল থেকে শুরু করে বারবার এসব সহিংসতার ঘটনার প্রধান কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সাম্প্রদায়িক হামলার তদন্ত হয় কিন্তু বিচার হয় না। বারবার দায়মুক্তি পাওয়ার কারণে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রহয়ে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবার জন্য দুষ্কৃতিকারীরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালিয়ে আসছে। সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হলে কারা লাভবান হয় তা উদ্ঘাটন করতে হবে। তাই সব শ্রেণীপেশার মানুষসহ রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, ইসলামিক স্কলার, মসজিদের ইমাম, পুরোহিত, জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এজন্য দরকার সামাজিক আন্দোলন। যে আন্দোলনে অগ্রভাগে থাকবে আজকের এই তরুণরা।’

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ৮ দাফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন-

১. দল মত নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক ঐক্যমত গড়ে তোলা। ২. ধর্মীয় অবমাননার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে করা। ৩. এক রাজনৈতিক দল আরেক রাজনৈতিক দলের উপর ব্লেইম গেইমের সংস্কৃতি পরিহার করে অপরাধী যে দলেরই হোকনা কেন তাকে বিচারের মুখোমুখী করা। ৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহারে উৎসাহিত করা। ৫. সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার করে যারা সংঘাত উস্কে দিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। একইসাথে অপরাধীদের দৃশ্যমান বিচার করা। তবে কোন অবস্থাতেই নিরপরাধ ব্যাক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। ৬. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে একটি নির্দেশনা বা গাইডলাইন তৈরি করা। দেশের খ্যাতিমান আইসিটি বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, আইসিটি বিভাগ ও বিটিআরসির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি এ বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করতে পারে। ৭. সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করে এরূপ ছবি বা বার্তা যেন কেউ পোস্ট করতে না পারে সে বিষয়ে ফেসবুকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা করা। ৮. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে কেউ ভুয়া একাউন্ট চালাতে না পারে সেজন্য সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার বিতার্কিকদের পরাজিত করে মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল এন্ড কলেজ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ তুহিন, সাংবাদিক আলাউদ্দিন আরিফ, সাংবাদিক অনিমেষ কর ও সাংবাদিক রেখা খান।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ