ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এবার দৌড়ঝাঁপে পুত্রবধূ শর্মিলা

প্রকাশনার সময়: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ০৩:৩৩ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ০৩:৩৫

উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার সুযোগ চেয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। এবার খালেদার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সরকারের শীর্ষমহলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি দলের তরফ থেকেও বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে জোরালো দাবি জানানো হবে। সবমিলিয়ে সরকারের শীর্ষমহলকে রাজি করানোর শেষ চেষ্টা চলছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ ওই মহল ‘সবুজ সংকেত’ দিলেই পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করা হবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য একাধিকবার বিদেশ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে প্রতিবারই সরকার বলছে_ সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় খালেদার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় শাশুড়িকে বিদেশে নেয়ার জন্য নতুনভাবে সামনে এসেছেন পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান।

সূত্র জানায়, করোনা-পরবর্তী অসুস্থতার কারণে ৫৩ দিন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর গত ১৯ জুন বাসায় নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। আবার অসুস্থতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গত ১২ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৪ অক্টোবর রাতে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসেন কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান হাসপাতালে। পরের দিন খালেদা জিয়ার ছোট একটি সার্জিক্যাল অস্ত্রোপচার হয়। তার শরীরে একটি ছোট চাকা হওয়ায় অস্ত্রোপচার করে সেটি অপসারণ করা হয়। একই সঙ্গে ওই অংশে ক্যান্সারের কোনো জার্ম আছে কিনা, সেটা পরীক্ষার জন্য ‘বায়োপসি’ করতে দেয়া হয়েছে। যদিও বায়োপসি রিপোর্ট নিয়ে বিএনপি এবং বেগম জিয়ার চিকিৎসক বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন কিছু জানানো হয়নি। এ বিষয়ে উভয়পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটা একজন রোগীর প্রাইভেসির বিষয়। এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই।

জানতে চাইলে খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শরীরে একটি লাম্প (ছোট চাকা) দেখা দেয়ায় সেটি কেটে বায়োপসি করতে দেয়া হয়েছে। মূলত ন্যাচার অব ভিউ জানার জন্য বায়োপসি করা হচ্ছে। তবে পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে তিন থেকে ১৫ দিন লাগতে পারে। এটি দেশে এবং দেশের বাইরে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ বা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত চিকিৎসা নিয়ে গণমাধ্যম বা সাধারণ মানুষ কতটুকু জানতে পারে? রোগীর ব্যক্তিগত কিছু গোপনীয়তা বলে কিছু থাকে। তাছাড়া চিকিৎসকদেরও একটি নীতি থাকে। রোগীর সব তথ্য জনসম্মুখে বলা যায় না।

এদিকে শাশুড়িকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে নতুন করে সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন কোকোর স্ত্রী শর্মিলা। এ বিষয়ে বিএনপি কিংবা তার চিকিৎসক টিমের কেউ মিডিয়ায় কথা বলতে রাজি নন। এমনকি খালেদা জিয়ার মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না।

দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়াকে লন্ডন বা আমেরিকা নিতে চায় তার পরিবার। এই দুই দেশের অনুমতি না মিললে সেক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর নিতে চায়। অবশ্য রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে। সরকারের নির্বাহী আদেশ ছাড়া এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। হাইকোর্টে জামিন পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশেই বাসায় থাকছেন খালেদা জিয়া। সুতরাং বিদেশে যেতে হলেও তাকে সরকারের বিশেষ আদেশেই যেতে হবে। যদিও এ বিষয়ে সরকারই সব করণীয় ঠিক করবে।

তবে খালেদার জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বলেছেন। সেজন্য সরকারের কাছে বারবার আবেদনও করেছি। সরকার অনুমতি না দিলে এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, খালেদা জিয়ার সার্জিক্যাল অপারেশনের পর বিএনপি নেতাদের নেতিবাচক মনোভাব আরো পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির পর বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীই চাইছেন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাক। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়েও এখন আর খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতাদের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান তারা।

এদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের একাধিক সূত্র বলেছে, বেগম খালেদা জিয়ার সার্জিক্যাল অপারেশনের ধকল কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তার শরীরের তাপমাত্রা আগের মতো ওঠানামার মধ্যেই আছে। তিনি মুখে খাবার খেতে পারছেন। তবে তার স্বাস্থ্যগত পুরোনো সমস্যাগুলো রয়েই গেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বেগম জিয়ার কিডনি-লিভার সমস্যা, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এখন এর সঙ্গে প্রায়ই তার শরীরে জ্বর দেখা দেয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন নেই।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলে খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্ত সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত চার দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় বৃদ্ধি করা হয়। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আবেদন জানানো হলেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ