ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

১ ঘণ্টা ১ মিনিট = তাণ্ডব

প্রকাশনার সময়: ২২ অক্টোবর ২০২১, ০৪:৩৯
সংগৃহীত ছবি

১৩ অক্টোবর রাত ২টা ১০ মিনিট থেকে ৩টা ১১ মিনিট। ‘ভবঘুরে’ ইকবাল হোসেনের এই ১ ঘণ্টা ১ মিনিটের কর্মকাণ্ডের নিট ফলাফল ‘দেশব্যাপী’ সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব। ঘটনার ৮ দিনের মাথায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আসা ভিডিও ফুটেজ ও শনাক্ত হওয়া ‘ভবঘুরে’ ইকবাল হোসেনের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে মিলছে এমন হিসাব।

এরই মধ্যে ইকবাল হোসেনের মা দাবি করছেন তার ছেলে ‘পাগল’। অন্যান্য সূত্র থেকেও ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে মিলছে ইয়াবাসক্তের সত্যতা। আর এতেই প্রমাণ মিলছে এক নিখুঁত চিত্রনাট্যে মঞ্চস্থ করা হয়েছে কুমিল্লার ঘটনা। আর এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চাঁদপুর, পীরগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনীতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নানুয়াদীঘিতে পূজামণ্ডপ তৈরি থেকে শুরু করে ঘটনা ঘটানো পর্যন্ত পুরো বিষয়টি নিখুঁতভাবে সাজানো হয়েছে। এবার নানুয়াদীঘিতে তৈরি অস্থায়ী মণ্ডপ ছিল রীতিমতো জাঁকজমকপূর্ণ। জৌলুসপূর্ণ আয়োজন করা হলেও এ মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা খাতে খরচ করা হয়নি কানাকড়িও। এখন শনাক্ত হওয়া ইকবাল হোসেন সত্যি সত্যি ‘ভবঘুরে-নেশাসক্ত-পাগল’ প্রতীয়মান হলে সন্দেহ করার যথেষ্ট সুযোগ থাকছে একটি অতিচতুর ও মেধাবী চিত্রনাট্যকারের চিত্রনাট্যে ঘটানো হয়েছে পুরো ঘটনা।

দ্বিতীয়ত, পূজামণ্ডপে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয়গ্রন্থ রাখার পরের ঘটনাগুলোও এখানে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করার দাবি রাখে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার রাতের পর প্রথম সকালে ৯৯৯-এ কল করে ইকরাম নামের এক ব্যক্তি মণ্ডপে মুসলিমদের ধর্মীয়গ্রন্থ রাখার তথ্য জানায়। আর এর অল্প সময়ের মধ্যেই বিষয়টি ফেসবুকে লাইভ করে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ফয়েজ।

সিসিটিভি ফুটেজে যা আছে : সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত সন্দেহভাজন ইকবাল হোসেন ১৩ অক্টোবর রাত ২টা ১০ মিনিটে হাতে পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে মাজার মসজিদের উত্তর গেট দিয়ে বের হন। তখন কোরআন শরিফ কোনো কিছু দিয়ে ঢাকা ছিল না। গেটে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ছিল ইকবাল। সেখান থেকে যখন কোরআন হাতে ২টা ১১ মিনিটে ইকবাল মসজিদের আঙিনা ত্যাগ করে তখন পবিত্র কোরআন শরিফে একটি সাদা কাপড় লক্ষ্য করা গেছে। যদিও তা স্পষ্ট নয়।

ফুটেজে আরও দেখা যায়, মসজিদ থেকে বের হয়ে কোরআন নিয়ে ইকবাল সোজা বাম দিকের সড়কে হেঁটে চলে যান। যদিও ডানদিকের সড়ক দিয়ে দুই থেকে আড়াই মিনিট হেঁটে গেলেই পূজাম-পটি পড়ে। মসজিদ থেকে পূজামণ্ডপের দূরত্ব দুই থেকে আড়াইশো মিটার। ২টা ১১ মিনিট থেকে ইকবাল কোরআন নিয়ে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। এরপর পূজামণ্ডপে গিয়ে হনুমানের পায়ের ওপর থেকে গদাটি সরিয়ে নিয়ে সেখানে কোরআন শরিফটি রাখেন। এরপর আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ৩টা ১২ মিনিটে হনুমানের পায়ের ওপর রাখা গদা নিয়ে ইকবাল সড়কে ঘোরাঘুরি করছেন।

১ ঘণ্টা ১ মিনিট ইকবাল ঠিক কোথায় কী করেছেন এমন প্রশ্নে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার বলেন, মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে হাতে করে ইকবাল ডান দিকে না গিয়ে বাম দিকে যান। নগরীর রাজগঞ্জ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে এরপর নানুয়াদীঘির পূজামণ্ডপে যান বলে ধারণা। ওই একঘণ্টা তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। তবে সার্কেল নিশ্চিত করেছেন দারোগা বাড়ির মাজার মসজিদ থেকেই ইকবাল কোরআনটি সংগ্রহ করেন।

ইকবালের প্ররোচনাকারী কারা? : পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা সন্দেহভাজন ব্যক্তি ইকবাল হোসেনের প্রতিবেশী ও তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন ইকবালের মানসিক অবস্থাকে ব্যবহার করে কেউ উস্কে দিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ইকবাল অনেক কারণে মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পূজামণ্ডপ থেকে কয়েক মিনিট দূরে নগরীর দারোগাবাড়ি মাজার ও মসজিদে যাওয়া-আসা করছিলেন তিনি। তারা বলছেন, সেখানকার কারো উসকানিতে ইকবাল মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে নানুয়াদীঘির পাড় পূজামণ্ডপে সেটি রেখে আসেন। উসকানির সঙ্গে জড়িত দুইজন হুজুরের কথা শুনেছেন তারা।

এদিকে, ইকবালের নানির বাড়ির সংলগ্ন ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেলের কিছু কর্মীর সঙ্গে কথা বলার সময়, পুলিশ ইকবালকে শনাক্ত করার জন্য তাদের একটি ভিন্ন ভিডিও দেখায়। এমনই একজন মো. মাজেদুল হক বাদল বলেন ভিডিওতে দেখা গেছে, দুইজন হুজুরের মতো ব্যক্তি ইকবালকে কোরআন প্রদান করছেন।

ইকবালের মা বিবি আমেনা বলেন, পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর ইকবালের বাবা নূর আহম্মেদ, মামা তাজুল ইসলাম ও সাফায়েতকে সাদাপোশাকে পুলিশ বাড়ি থেকে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ইকবাল মাদক সেবনে অভ্যস্ত ছিল। নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকায় নানুর বাড়িতে বড় হয়েছে। ১২ বছর বয়স থেকে ইকবাল মাদক সেবন শুরু করে। প্রায় ১২ বছর আগে তাকে বিয়ে করানো হয়। তবে ইকবালের নানা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তার প্রথম স্ত্রী আশা একমাত্র ছেলে তৌসিফকে নিয়ে চলে যায়। ছেলে হারানোর শোক থেকে ইকবাল আগের চেয়ে অনেক বেশি হিংস্রর ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

তার মা আরো বলেন, পরে তাকে আবার বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তার দ্বিতীয় স্ত্রী রুমি করোনা মহামারি শুরুর ঠিক আগে তাকে ছেড়ে চলে যায়। এটি তাকে মানসিকভাবে আরো অস্থির করে তোলে।

পরে মহামারি শুরু হলেও প্রায়ই নগরীর দারোগাবাড়ি মাজারে যেতে শুরু করে ইকবাল। বেশিরভাগ সময়ই সে মাজারে থাকত।

ইকবালের ছোট ভাই রায়হান জানান, ইকবালকে খুঁজতে পুলিশের সঙ্গে গত শুক্রবার থেকেই আছেন। ইকবাল ভালো কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। ইকবালের নানি রহিমা বলেন, ইকবাল কারো প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারে। তার বোধবুদ্ধি এমন না। সে ম-প পছন্দ করত না।

তিনি আরো জানান, গত ১৩ দিন আগে তিনি তার ঘর থেকে ইকবালকে বের করে দেন। এর আগে ইকবাল ব্লেড দিয়ে চারটি হাঁস জবেহ করে। স্বাভাবিক অবস্থায় সে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করত।

ইকবাল মাজারে কোন হুজুরের কাছে যাতায়াত করতেন জানতে চাইলে ইকবালের মা আমেনা বলেন, জানেন না তিনি কোন হুজুরের কাছে যেতেন।

ইকবালকে এই ঘটনার পেছনে প্রধান মানুষ হিসেবে সন্দেহ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি না কীভাবে, কে তাকে দিয়ে কাজটি করিয়েছে। আগে কিছু ঘটায় সে আত্মগোপনে চলে যেত কিন্তু কখনো এতদিন থাকেনি।

মামলার সঙ্গে যুক্ত এমন কাউকে আটক করার বিষয় জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার বলেন, তদন্তের এ পর্যায়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মণ্ডপে কোরআন রাখায় যে চক্রটি জড়িত, ইকরাম তাদের একজন। তিনিই গত বুধবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯-এ কল করেন। তারপর ওসি আনওয়ারুল আজিম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি কোরআন শরিফটি উদ্ধারের পাশাপাশি ইকরামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যান।

পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইকরাম রাতে নেশা করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন ওই রাতে ৩ পিস ইয়াবা সেবন করেন। পরে মণ্ডপের পাশে অবস্থান নেন। মণ্ডপে কোরআন রাখেন একজন। আর ইকরামের দায়িত্ব ছিল, ভোরে বিষয়টি পুলিশকে জানানোর। সে অনুযায়ী তিনি ৯৯৯-এ ফোন করেন।

ওসি আনওয়ারুল আজিম মণ্ডপ থেকে কোরআন উদ্ধারের সময় সেটি ফেসবুকে লাইভ করেন ফয়েজ নামের এক যুবক। সেই লাইভের পরেই উত্তেজিত মানুষ জড়ো হন ঘটনাস্থলে, শুরু হয় সহিংসতা। এই ফয়েজকেও আটক করেছে পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা আরো জানান, তাদের ধারণা দীঘির পাড়ের পূজাম-প থেকে যে কোরআন শরিফটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি আনা হয় পাশের মাজার থেকে। নানুয়াদীঘির পাশেই শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারটির অবস্থান, ম-প থেকে হেঁটে যেতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ মিনিট। মাজারের বারান্দায় দর্শনার্থীদের তিলাওয়াতের জন্য রাখা থাকে বেশ কয়েকটি কোরআন শরিফ। রাত-দিন যে কোনো সময় যে কেউ এখানে এসে তেলাওয়াত করতে পারেন।

দারোগাবাড়ি মাজারের মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন এমন তিনজনকে ঘটনার পর থেকে দেখা যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একজনের নাম হুমায়ুন কবীর (২৫)।

দারোগাবাড়ি মাজারের খাদেম আহামুদ্দুন্নাবী মাসুক জানান, হুমায়ুন মাজারে এসে নামাজ আদায় করতেন। তার বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দেওরা এলাকায়। ঘটনার পরদিনই তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। এছাড়া মাজারে আরো দুই-একজন নামাজ আদায় করতেন। তাদের এখন আর দেখা যাচ্ছে না।

ইকবালকে ঘিরে ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য : কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখায় শনাক্ত হওয়া মাদকাসক্ত ইকবাল হোসেনকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার পর তাকে আত্মগোপনে রেখেছে একটি চক্র। ওই চক্রটিকেও শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি ইকবালের সঙ্গে অপরিচিত আরো ২ থেকে ৩ জনের সন্ধান করা হচ্ছে। তারা কয়েকদিন ধরে ইকবালের সঙ্গে মাজারে আসা-যাওয়া করতেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ওই ব্যক্তিরাই ইকবালকে ব্যবহার করে মাজারের কোরআন নিয়ে মন্দিরে রেখে আসে।

এ বিষয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ী ব্যক্তিকে আমরা চিহ্নিত করেছি। কুমিল্লা মাজারের সঙ্গে যে মসজিদ, সেটা প্রসিদ্ধ মসজিদ। লোকটি (যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে) রাত তিনটার দিকে কয়েকবার (সেখানে) গিয়েছেন। সেখানে তিনি মসজিদের খাদেমের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা এ কাজে অভিজ্ঞ তারা নিশ্চিত হয়েছেন, ব্যক্তিটি মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ এনে রেখেছেন, এটা তারই কর্ম। আমরা যতটুকু দেখেছি, লোকটি কোরআন এনে মূর্তির কোলে রেখে মূর্তির গদাটি কাঁধে করে নিয়ে আসছে।

‘এই লোকটি কার প্ররোচনায়, কার নির্দেশে, কীভাবে এই কর্মটি করলেন? তিনি তো প্ল্যানমাফিক করেছেন। কাজেই নির্দেশিত হয়ে কিংবা কারো প্ররোচনা ছাড়া এ কাজটি করেছেন বলে আমরা এখনো মনে করি না। তাকে ধরতে পারলে আমরা বাকি তথ্য উদ্ধার করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’

ওই যুবক কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা তাকে পাঠিয়েছিল হয়তোবা_ আমি এখনো বলতে পারছি না, তারা তাকে লুকিয়ে রাখতে পারে। আমরা তাকে খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছি।

জানা গেছে, কুমিল্লার ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরায় শনাক্ত ইকবাল নামের ওই ব্যক্তিকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ইকবাল হোসেন কুমিল্লা নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ড সুজানগর এলাকার মাছ বিক্রেতা নূর আলমের ছেলে। ইকবাল মাদকাসক্ত। তিনি টাকার জন্য তার মা আমেনা বেগমকে বিভিন্ন সময় মারধর করতেন এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করতেন। চুরির অভিযোগে সম্প্রতি এলাকাবাসী তাকে মারধর করে। এরপর ১৫ দিন আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে ইকবাল মাজারে থাকত। সম্প্রতি সেখানে আরো কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি ইকবালের সঙ্গে মাজারে আসা-যাওয়া করত। পাগলের বেশে থাকা ওই ব্যক্তিরা ঘটনার পর থেকে উধাও। তবে ইকবালের সহযোগী হিসেবে মাজার থেকে অন্তত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, কোরআন রাখার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর রাত দুইটা ১০ মিনিটে দারোগাবাড়ির মাজার থেকে কোরআন সদৃশ গ্রন্থ হাতে নিয়ে পুকুরের পূর্ব পাড় দিয়ে বের হন এক ব্যক্তি। আরেক ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ৩টা ১২ মিনিটে পূজামণ্ডপ থেকে আসতে দেখা যায় তাকে। এ সময় তার কাঁধে হনুমান মূর্তির গদাটি রাখা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পবিত্র কোরআন মূর্তির যে স্থানে রাখা হয়েছে, গদাটি না সরালে সেখানে রাখা তা যেত না।

সূত্রমতে, সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত ব্যক্তিটি ঘটনার মূল হোতা। তাকে খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন স্থানে একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করছেন। তাই তাকে গ্রেফতার করতে সময় লাগছে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা- তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত জানা যাবে।

উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে নানুয়াদীঘির পাড় পূজাম-পসহ নগরীর কয়েকটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, প্রতিমা ভাঙচুর, ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এ ইস্যুতে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

দুর্গাপূজায় সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়াদীঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। ওই মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরো বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ