বিমান টিকিটের ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে পুঁজি হারিয়েছেন একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ইনচার্জ সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল। প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়িক অংশীদারদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন তিনি। প্রতারিত হলেও সেই ঘটনায় হওয়া আরেকটি মামলায় তাকেই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে ঘটনায় করা মামলায় মিজানুর রহমান কারাভোগ করছেন সেখানে টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকম নামে কোম্পানিটি থেকে তিনি কোনো টাকা নেননি। তিনি শুধু কাগজে-কলমে কোম্পানিটির ডিরেক্টর। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন কিংবা কোম্পানি পরিচালনায় মিজানুর রহমানের কখনোই কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো গ্রাহকের সঙ্গে তিনি কখনোই কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন করেননি। কোনো গ্রাহকের সঙ্গেও তার পরিচয় ছিল না। এমনকি কোম্পানিটি থেকে তাকে কোনো বেতন-ভাতা কিংবা সম্মানিও দেওয়া হয়নি। কোম্পানির অ্যাকাউন্ট থেকেও তার অ্যাকাউন্টে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।
প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছেন বুঝতে পেরে মিজানুর রহমান এক সময় প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি উকিল নোটিশ পাঠান। তবে কোনো প্রত্যুত্তর আসেনি। গ্রাহক কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলার আগেই গত ১৯ মে মিজানুর রহমান কোম্পানির এমডি আবদুর রাজ্জাক, চেয়ারম্যান মোসা. নাসরিন সুলতানা ও পরিচালক আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পরবর্তীতে গত ১ জুন সিএমএম আদালতে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ওই চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মিজানুর রহমান। মামলাটি এখন পিবিআইতে (কল্যাণপুর ব্রাঞ্চে) তদন্তাধীন। মূলত মিজানুর রহমান সোহেলের মামলার পর টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের গ্রাহক ও সিআইডি মামলা করে।
মিজানুর রহমানের করা মামলার বিষয়ে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পিবিআইয়ে থাকা সোহেলের মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিষয়গুলো তদন্ত কর্মকর্তা খতিয়ে দেখছেন।
এসব তথ্য জানিয়ে তাকে নির্দোষ দাবি করে মুক্তি চেয়েছেন স্ত্রী সুমাইয়া সিমা। সিমা জানান, গত এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে মিজানুর রহমান সোহেল খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক ও তার বোন চেয়ারম্যান মোসা. নাসরিন সুলতানা কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তখন মিজানুর রহমান সব পরিচালককে সিসি রেখে অফিসের হিসাব চেয়ে দুই দফায় এমডিকে মেইল করেন। ফোনেও নানান সময়ে অফিসের হিসাব দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যান লাপাত্তা হয়ে যান। ফলে মিজানুর রহমান তার বিনিয়োগ করা অর্থও (পুঁজি) হারিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানির তথ্য ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর নগদ অর্থ উত্তোলন করা হতো।
এমডি তার ব্যাংক লোন, গাড়ির কিস্তি অফিসের অ্যাকাউন্ট থেকে দিয়েছেন। পরিচালকদের অনুমোদন না থাকলেও এমডি প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে মাসিক সম্মানী নিয়েছেন। নিজের নামে একাধিক ব্যাংক এফডিআরও করেছেন। অফিসের যৌক্তিক কোনো হিসাব এমডি বা অফিস সংশ্লিষ্ট কারও কাছেই নেই।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, এমডি রাজ্জাক পাঁচজনের যৌথ কোম্পানি টোয়েন্টিফোর টিকিটের টাকা তার ব্যক্তিগত কোম্পানি বিডি ট্যুরিস্ট ডিএমসির মাধ্যমে লেনদেন করতেন। অবৈধভাবে নিজের ও বিডি ট্যুরিস্ট ডিএমসির নামে একাধিক ব্যাংক ডিপিএস করেছিলেন। বিডি ট্যুরিস্টের নামে যত লোন ছিল এবং বিডি ট্যুরিস্টের অফিস ও স্টাফ চালানো হতো টোয়েন্টিফোর টিকিটের টাকা দিয়ে। অ্যাভন নামে একটি আইটি ফার্ম করেছিলেন, সেটির টাকাও টোয়েন্টিফোর টিকিট থেকে নিতেন। ইভ্যালিতে তার বড় একটা বিনিয়োগ ছিল, সেই টাকাও টোয়েন্টিফোর টিকিট থেকে নেওয়া। কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য বাইক সার্ভিস দেওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
গত ১১ অক্টোবর সকালে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমানের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণা করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনলাইন এজেন্সি টোয়েন্টিফর টিকিট ডটকম। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের পরিচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মিজানুর রহমান সোহেলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই সাগর আলী বলেন, তিনি কোম্পানির মালিকদের একজন। যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি তদন্তাধীন। তার সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, সেটি এখনই বলা সম্ভব না, তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে। মামলা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
নয়া শতাব্দী/এমএইচআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ