ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

অপকর্মে বেবিচকের ৯০ জন!

প্রকাশনার সময়: ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০৬:২৮

স্বর্ণ চোরাচালান ও মানব পাচারসহ নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও কয়েকটি বিমানের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারা সংঘবদ্ধ থাকলেও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি বেশ কয়েকজনকে অভ্যন্তরীণ শাস্তির আওতায় আনা হলেও কৌশলে তারা আবারো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।

এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ৯০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়েছে। অভিযুক্তরা বেবিচক ও কয়েকটি এয়ারলাইন্সে কর্মরত রয়েছেন। পরে ওই প্রতিবেদনটি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বেবিচকে পাঠিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রমতে, তিন দিন আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮০ পিস সোনার বারসহ সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মী মোহাম্মদ বেলালকে গ্রেফতার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেশ কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম বলে দিয়েছেন। ওই বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান জানান, ৮০ পিস সোনার বারসহ সিভিল এভিয়েশন বিভাগের নিরাপত্তা কর্মী বেলালকে ধরা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে- তারা সোনা পাচারের পাশাপাশি পাসপোর্টে জাল ভিসা লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট বিমানের বোর্ডিং ও ইমিগ্রেশন পুলিশের এক শ্রেণির অসাধু সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশে মানব পাচার করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশ থাকার সত্ত্বেও অভিযুক্ত অধিকাংশ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখনো নেয়া হয়নি কোনো ধরনের ব্যবস্থা। তবে মুখ রক্ষায় কিছু অভিযুক্তকে শাখা বদল করে নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব বিমানবন্দরের অপরাধমূলক কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যুক্তরাজ্য কার্গো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর সিভিল এভিয়েশন ও বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল সংগ্রহ করেছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এমনকি শাহজালালের নিরাপত্তায় দায়িত্বে আসা ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা রেড লাইনও তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করেছে। তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি সিএএবি’এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দিয়েছে। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, সিভিল এভিয়েশন ও বাংলাদেশ বিমানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমনকি তারা সোনা ও মানব পাচারের সঙ্গেও জড়িত। তাদের মধ্যে আবার অনেকে ঠিকভাবে অফিস করছে না।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি মাহবুব আলী সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশের সব বিমানবন্দর দুর্নীতিমুক্ত করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আসছি। কোনো বিমানন্দরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হবে না। বেবিচক বা বিমানের কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতি এবং অনিয়ম দূর করার চেষ্টা চলছে। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

জানা গেছে, বেবিচক, বিমানসহ বিভিন্ন সংস্থার অপরাধ ঠেকাতে নতুন করে পরিকল্পনা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তারা বেবিচকের অপরাধী সিন্ডিকেটকে ভেঙে দিতে চাচ্ছে। এজন্য বিমানবন্দরে যারা মানব পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। ওই তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি তাদের বিমানবন্দরে প্রবেশ করতেও বারণ করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বেবিচকের সবধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে। তারা নানা সিন্ডিকেট করে বিমানবন্দর ও বিমানের সুনাম নষ্ট করছে। এতে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। বেবিচক কর্তৃপক্ষকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী সিলেট ও ঢাকার কয়েকটি ট্রাভেলস এজেন্সি দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী ও তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে দুটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে ৯০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিষিদ্ধ করে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। গত ৪ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫টি চিঠির মাধ্যমে ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা মন্ত্রণালয় জানতে চেয়েছে। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রোকসিন্দা ফারহানা স্বাক্ষরিত সর্বশেষ চিঠিতে উল্লেখ করা হয় শাহজালাল বিমানবন্দরে অপরাধে সক্রিয়দের বিরুদ্ধে গৃহীত অগ্রগতির বিষয়ে বেবিচক সর্বশেষ যে চিঠি দিয়েছে তাতে প্রদত্ত তথ্যাদি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।

বেবিচকের জবাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠি অনুযায়ী বিদেশি এয়ারলাইন্সে কর্মরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে মন্ত্রণালয় থেকে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃক কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এ সংক্রান্ত তথ্য দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে বিদেশি এয়ারলাইন্সে কর্মরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় থেকে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃক কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনে শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কিছু প্রতিষ্ঠানকে মানব পাচারকারী চক্রের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ