দেশে একসময় বিনোদনের প্রধান মাধ্যম বলতেই ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। কিন্তু ১৯৯২ সালে ডিস চালু হওয়ার পর থেকে ক্রমেই বাড়তে থাকে টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা। বর্তমানে প্রায় দেশি-বিদেশি চ্যানেলের সংখ্যা ১০০টি। এর মধ্যে বিদেশি চ্যানেলের সংখ্যাই বেশি। শিল্প-সাহিত্যের মতো টেলিভিশন চ্যানেলও যেহেতু কাঁটাতারে আটকে রাখার বিষয় না, তাই টেলিভিশন চ্যানেলের পরিসর বৃদ্ধি পাওয়া আশাব্যঞ্জক বটে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বাণিজ্যিক নীতিমালারও বিধান রয়েছে। সেই অনুসারেই এক দেশের চ্যানেল অন্য দেশে সম্প্রচারিত হয়।
সম্প্রতি সরকারের নির্দেশে ক্যাবল অপারেটররা বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিলে সম্প্রচার নীতিমালার বিষয়গুলো চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় চলে আসে। বাংলাদেশেও এ ধরনের নীতিমালা রয়েছে, যে নীতিমালা মেনে সব চ্যানেলের সম্প্রচার হয়। তবে এদেশে বাইরের চ্যানেল হরহামেশাই চালাতে পারছেন কেবল অপারেটর মালিকরা। এবং টেলিভিশন দর্শকরাও দেশীয় চ্যানেলের চেয়ে বিদেশি চ্যানেলের অনুষ্ঠানই বেশি দেখছেন বলে বিভিন্ন গবেষণায় ওঠে এসেছে।
বাংলাদেশে ‘কান্তার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান টিভি চ্যানেলের রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) করে। তবে গত চার মাস ধরে নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা তা করছে না। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা রাবেয়া সুলতানা বাঁধন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা আগে যখন টিআরপি করতেন তখন বাংলাদেশের দর্শকদের ঘণ্টা হিসেবে টিভি দেখার সময়ে শতকরা ৮০ ভাগ ছিল বিদেশি চ্যানেল। এর মধ্যে ৬০ ভাগ ছিল ভারতীয় চ্যানেল।
সম্প্রতি সরকার জানিয়েছে, ক্লিনফিড চ্যানেল (বিজ্ঞাপন ছাড়া টিভি ট্রিমিং) ছাড়া বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে থাকবে। জানা গেছে, সরকারের এ ঘোষণার আগে প্রচারে ছিল ১০০টি বিদেশি চ্যানেল। এর মধ্যে ৬৫টি ছিল ভারতীয়। সরকারি কোষাগারে কোনো প্রকার শুল্ক ছাড়াই এ দেশে প্রচার হয়ে আসছে বিদেশি চ্যানেলগুলো। যে কারণে বিপুল পরিমাণ মুনাফা হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
একুশে টেলিভিশনের হেড অব নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স রাশেদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের বাজার বছরে ২১-২২ হাজার কোটি টাকার। আর বাংলাদেশে যে ভারতীয় চ্যানেলগুলো সম্প্রচার হয় তারা কমপক্ষে আট হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল ভারতে দেখা যায় না।
রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘তারা যে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয় সেই ভারতীয় পণ্যও বাংলাদেশের বাজার দখল করছে। সেই ক্ষতির হিসাব করলে সেটা অনেক। ভারতীয় চ্যানেলের এই বিজ্ঞাপন থেকে সরকার কোনো ট্যাক্স পায় না। অথচ আমরা ট্যাক্স দেই।’
অন্য দেশে এ দেশের চ্যানেল প্রচার করতে হলে বিরাট অংকের ট্যাক্স গুনতে হয়। তবে বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে বিদেশি চ্যানেলগুলো বাণিজ্য শুল্কে ছাড় পায় বলেই ‘বিদেশি চ্যানেল এত সহজলভ্য’ বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সংশ্লিষ্টরা।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ