ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘জটিল অসুখে নির্বাচন, লাগবে মেডিকেল বোর্ড’

প্রকাশনার সময়: ১০ অক্টোবর ২০২১, ২১:৩৩ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১, ২১:৩৭

নির্বাচন এখন কতিপয় জটিল অসুখে আক্রান্ত এমন মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, নির্বাচনকে বাঁচাতে ‘মেডিকেল বোর্ড’ গঠনের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচন অসুখে আক্রান্ত হওয়ায় গণতন্ত্রের অবস্থা সংকটাপন্ন। একক ডাক্তারের পক্ষে তাকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ‘মেডিকেল বোর্ড’ গঠনের কোনো বিকল্প নেই। মৃত্যুপথযাত্রী গণতন্ত্রকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো একান্ত অপরিহার্য। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা গণতন্ত্রহীন নির্বাচন চাই কিনা!

রোববার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে ‘চলমান স্থানীয় নির্বাচন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ : আমার কথা’ শীর্ষক এক লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে এই কমিশনার বলেন, ‘৭ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচন আমি নিজে পরিদর্শন করি।

ইভিএমে ভোটগ্রহণে এখানে ২০ শতাংশ ভোট পড়ে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ভোটের টার্নআউট এত কম হওয়ায় জনগণের নির্বাচনবিমুখতা আমাকে হতাশ করে। অপরদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচনে ইভিএমে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই বৈষম্য কেন তার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন। ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবে এর প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে কাক্সিক্ষত ফল লাভ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম নগরের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জামানত হারিয়েও একজন প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। স্বভাবতই ওই নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যা বিশ্বে নজিরবিহীন। আমার মতে, এতে নির্বাচনে একটা নতুন ধারা সূচিত হলো। নবনির্বাচিত কাউন্সিলর অবশ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিক মামলায় দুই বছরের বেশি সময় জেলে রয়েছেন। এই উপনির্বাচনের ফলাফল নির্বাচনের প্রতি জনগণের অনাস্থার বহির্প্রকাশ বলা হলেও ইতিবাচকভাবে বলা যায়, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা এখন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এবং জনসমর্থন না থাকলেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন।’

নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমঝোতা না হলে অরাজকতার আশঙ্কা : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিভিন্নজনের তর্কবিতর্ক এখন তুঙ্গে। গত ৫০ বছরে সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়ন করা হয়নি। বাধ্যতামূলক হলেও সব ক্ষমতাসীন সরকার এটা লঙ্ঘন করেছে।

সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা থাকলে, এই আইন করা অনস্বীকার্য। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সব দলের সমঝোতা ছাড়া এ আইন করা অসম্ভব। তবে আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়। আইন প্রণয়ন নির্বাচনের অন্যতম বা প্রধান সোপান হলেও অবশ্যই তা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সমঝোতা না হলে দেশব্যাপী অরাজকতা ও প্রাণহানির আশঙ্কা করি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার পূর্বশর্ত ছিল গণতন্ত্র। সংবিধানের চারটি মূলনীতিতে গণতন্ত্র সন্নিবেশিত হয়েছে। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও আমরা যদি অন্ধকার ঘরে একটি কালো বিড়ালের মতো গণতন্ত্রকে খুঁজে ফিরি, এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? একজন ভোটার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছামতো ভোট প্রদান করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসবেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র কি এই আকাক্সক্ষাটুকু পূরণ করতে পারবে না?’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ